MrJazsohanisharma

পূর্বজন্ম এবং পরজন্ম সত্যিই কী আছে? (পর্ব - ২)

 



পূর্বজন্ম এবং পরোজন্ম সত্যিই আছে কিনা এ নিয়ে আমি বিস্তারিত ভাবে আগেই একটা নিবন্ধ লিখে রেখেছি, যা এই ব্লগের উপর পড়ে আছে। জন্ম এবং মৃত্যুর এই চক্রাকার আবর্তন হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্মের মধ্যে থাকা একটা ধর্মীয় বিশ্বাস। আমি আমার আগের লেখায় জন্মান্তরবাদ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অন্ধবিশ্বাস ও ধারণা গেঁথে রয়েছে, তা যুক্তি এবং বাস্তবের উদাহরণ দিয়ে খণ্ডন করেছি। আমার এই নিবন্ধে জন্মান্তরবাদের বিপক্ষে থাকা আরও একটা যুক্তি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, যা সম্পূর্ণভাবে পূর্বজন্ম এবং পরোজন্মের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করে দেয়, যা আগের নিবন্ধে উল্লেখ করা নেই। পুরো লেখাটা মন দিয়ে পড়ুন, এটা নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করুন এবং পুরো বিষয়টা কতটা ঠিক আর কতটা ভুল, সে ব্যাপারে নিজেই সিধান্ত গ্রহণ করুন। সত্য-মিথ্যা বোঝবার দায় আপনার!   

 

আগে বিষয়টা ভালো করে বুঝুন!

ভারতীয় দর্শনে, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্মের মতে কোন মানুষকে জন্ম ও মৃত্যুর চক্রাকার আবর্তন থেকে মুক্তি পেতে হলে, তাকে “মোক্ষ” লাভ করতে হবে। এই মোক্ষ কথাটি এসেছে সংস্কৃত: “मोक्ष” শব্দ থেকে, যার অর্থ হল মুক্ত করা বা ছেড়ে দেওয়া। তাই যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষ মোক্ষ লাভ না করছে, সে ততদিন অবধি বারবার পুনর্জন্ম এবং জীবনের নিষ্ঠুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকবে এবং এই সংসারের মধ্যে থেকে তাকে দুঃখ যন্ত্রণা রোগ ব্যাধি শোক দুর্ভোগ সবসময়ই পেতে হবে। কিন্তু যে একবার এই মোক্ষ লাভ করবে, সে ব্যাক্তি পুনর্জন্মের কঠিন চক্রাকার বন্ধন থেকে চির মুক্তি পাবে এবং এই পুনর্জন্মের সঙ্গে জড়িত সকল দুঃখ দুর্ভোগ ও জ্বালা যন্ত্রণা থেকে বিছিন্ন হয়ে যাবে। অতএব, এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্মের মানুষের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হল তাকে যেন এই পৃথিবীতে আবার যেন জন্মাতে না হয়।

 

মোক্ষ এবং জন্মান্তরবাদের মহাজাগতিক ও দার্শনিক সমস্যা!

 

১) মানুষ জন্মায়, কারণ তার “মা বাবা” যৌন সম্পর্ক (Sexual Intercourse) করেছিল

আপনি এবং আমি, আমরা সবাই এই পৃথিবীতে জন্মেছি কারণ আমাদের “মা বাবা” যৌন সম্পর্ক করেছিল। মানুষ আকাশ থেকে পড়ে জন্মায়নি, কিংবা গাছেও ফলেনি। এই কথাটা বুঝতে কারও অসুবিধা হতে পারে কি? এবার ধরুন, পৃথিবীর মানুষজন সিধান্ত নিল যে, তারা আর বিয়ে থা করবে না, কোন সন্তানের জন্মও দেবে না। তাহলে সেক্ষেত্রে আর কোন মানুষও জন্মাবে না। আর মানুষ যদি না জন্মায়, তাহলে তার মৃত্যুও হবে না! ব্যাস! এখানেই পুনর্জন্মের চক্রাকার বন্ধন শেষ হয়ে গেল আর তার জন্য মোক্ষ লাভের কোনও প্রয়োজন হল না।

 

২) লক্ষ লক্ষ মানুষ মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মায়

হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্মের মতে একজন ব্যাক্তিকে মোক্ষ লাভ করতে হলে, তাকে অবশ্যই “আত্ম উপলব্ধি” (Self Realization) করতে হবে এবং তাকে নিজের সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে “আত্ম সচেতন” (Self Conscious) হয়ে উঠতে হবে। এ ছাড়া কোনও মানুষের পক্ষে মোক্ষ পাওয়া সম্ভব নয়! আমরা সকলেই এ কথা জানি, পৃথিবীতে অসংখ্য মানসিক প্রতিবন্ধি (Psychologically Disabled) মানুষ আছে, অসংখ্য মানুষ মানসিক প্রতিবন্ধি হয়েই জন্মায়। এমন ধরণের মানুষের ক্ষেত্রে আত্ম উপলব্ধি কিংবা আত্ম সচেতন হয়ে ওঠা তো দূরের কথা, তারা দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকবার জন্য অতি সাধারণ সিধান্ত নিতেও অক্ষম! মানসিক প্রতিবন্ধি মানুষেরা কোনটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক তার পার্থক্য বোঝে না। ভালো মন্দ বিচার করবার জন্য মানুষের যে জ্ঞান ও চিন্তাশৈলীর প্রয়োজন, তা এ ধরণের মানুষ কখনই করতে পারবে না! তাই এমন ধরণের মানুষের কাছ থেকে আধাত্মিক চেতনা আশা করাটা হাস্যকর একটা ব্যাপার। আমাদের সমাজে এমন ধরণের মানুষ অন্য মানুষের দয়ার উপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকে। অতএব, মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধি মানুষের পক্ষে কোন ভাবেই মোক্ষ পাওয়া সম্ভব নয়।   

 

মানুষ একবার মাত্র জন্মায়, তার মৃত্যু হওয়ার পর সে আবার নতুন করে জন্ম নেয় না!

 

“কেন না জীবিত যারা, তারা অন্তত জানে, তারা একদিন না একদিন মরবেই; কিন্তু মৃত যারা, কিছুই জানে না তারা; কোন নতুন পাওনা তাদের তো পাওয়ার কথা নয়; তাদের স্মৃতি তো মানুষের মন থেকে মুছেই গেছে। তাদের সমস্ত ভালোবাসা, তাদের সমস্ত ঘৃণা, তাদের সমস্ত ঈর্ষা, সবই সেই কবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সূর্যের নিচে এখানে যা কিছু করা হয়, কোন দিনও আর তাতে অংশ নেওয়ার কোন সুযোগই পাবে না তারা।”  (উপদেশক ৯:৫-৬)

 

“আবার মানুষকে যেমন একবারই মরতে হয়, আর তার পরে তার বিচার হয়…” (হিব্রু ৯:২৭)

 

“…মৃতেরা জীবনে যা যা করেছিল, সেই অনুসারে তাদের বিচার করা হল। তখন মৃত্যু আর অধোলোককে নিক্ষেপ করা হল সেই আগুনের হ্রদে। এই যে আগুনের হ্রদ, আসলে এই তো দ্বিতীয় মৃত্যু। যাদের নাম জীবনগ্রন্থে পাওয়া গেল না, তাদের সকলকেই সেই আগুনের হ্রদে ঠেলে ফেলে দেওয়া হল।” (প্রত্যাদেশ ২০:১৩-১৫)

 

“কিন্তু ধর্মপালনের ব্যাপারে কাপুরুষের যারা, সত্যকে বিশ্বাস করতে চায়না যারা, ঘৃণ্য স্বভাবের মানুষ যারা, কিংবা খুনী, ব্যভিচারী, মন্ত্রজালিক যারা, যত মূর্তির পূজা করে যারা, যত রকমের প্রতারণা করে বেড়ায় যারা, তাদের সকলকেই শেষে গিয়ে পড়তে হবে সেই হ্রদের মধ্যে, যেখানে সর্বদাই আগুন ও গন্ধক জ্বলতে থাকে। আর একেই বলে দ্বিতীয় মৃত্যু।” (প্রত্যাদেশ ২১:৮)


 

 


নবীনতর পূর্বতন