সাধু পিটার, প্রভু যীশুর প্রেরিত শিষ্যদের প্রধান ছিলেন। যে মানুষটি প্রভু যীশুর প্রতি তার বিশ্বাসের জন্য স্বয়ং যীশুর কাছ থেকে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছিলেন এবং তার সাথে পেয়েছিলেন খ্রীষ্টমণ্ডলীর ছোট বড় সকলকেই পরিচালনা ও সঠিক ধর্মশিক্ষা প্রদান করবার গুরুদায়িত্ব; সেই মানুষটাই কিনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে যীশু খ্রীষ্টকে নিজের প্রভু বলে চিনতে অস্বীকার করেছিলেন। বিষয়টি হতাশাজনক হলেও, এর পিছনে রয়েছে গভীর কিছু কারণ। প্রতিটি খ্রীষ্টানের আশা থাকে যে, সে খ্রীষ্টের একজন আদর্শ শিষ্য ও অনুগামী হয়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে মানুষ মাত্রই স্বভাব-দুর্বল প্রাণী। আমাদের মধ্যে রয়েছে অনেক রকমের দোষদুর্বলতা ও বিভিন্ন অক্ষমতা। তাই তো অনেক সময়েই আমরা এমন সমস্ত কাজ করে বসি যা আমরা আদৌ করতে চাই না, বা আমাদের করাটা উচিত নয়। এমনকি জ্ঞানীগুণী ও মহান ব্যাক্তিদের দ্বারাও অনেক সময় বড় ধরণের ভুল হয়ে যায়। তবে তার অর্থ এই নয় যে তাঁরা মহান নন। তাঁরা অন্য সকলেরই মতো রক্ত মাংসেরই মানুষ। যে সমস্ত কারণে সাধু পিটার, প্রভু যীশুকে নিজের আপন প্রভু বলে চিনতে অস্বীকার করেছিলেন, ঠিক সেই একই কারণে আজও বহু মানুষ যীশুকে নিজের প্রভু বলে চিনতে অস্বীকার করে। সেই সমস্ত কারণগুলি আমাদের জানা দরকার এবং জানা দরকার কেমন ভাবে তেমন ভুলগুলি এড়িয়ে চলা যায়। প্রকৃতপক্ষে এগুলি খ্রীষ্টধর্মের গভীর ঐশতত্ত্ব ও ধর্মীয় শিক্ষা সম্বন্ধে আমাদের অবগত করে দেয়। যা আমাদের বিশ্বাসকে যাচাই ও সুদৃঢ় করবার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। পবিত্র বাইবেলের চারটি মঙ্গলসমাচার মনোযোগ সহকারে পড়লেই আমরা সেই বিশেষ কারণগুলি দেখতে পাবো যার জন্যে সাধু পিটার প্রভু যীশুকে তিনবার চিনতে অস্বীকার করেছিলেন। সেগুলি হলোঃ
১) পবিত্র শাস্ত্রে উল্লেখ করা ঈশ্বরের ভবিষ্যৎবাণীকে শিথিল ভাবে নেওয়া।
২) নিজের খ্রীষ্টবিশ্বাসের উপর দৃঢ় ভরসা রেখে অন্যদের বিশ্বাসকে ছোট করে দেখা।
৩) সময় মতো প্রার্থনা না করা।
৪) যীশুকে দূর থেকে অনুসরণ করা।
৫) অবিশ্বাসীদের সঙ্গে গিয়ে মিশে যাওয়া।এখন আমরা
উল্লিখিত ঐ বিষয়গুলিকে আরও বিস্তারিত ভাবেই পবিত্র বাইবেলের আলোয় বোঝবার চেষ্টা করবো। এতে আমরা বুঝতে পারব সাধু পিটারের ভুলটা ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে হয়েছিল।
১) পবিত্র শাস্ত্রে উল্লেখ করা ঈশ্বরের ভবিষ্যৎবাণীকে শিথিল ভাবে নেওয়া
যীশু খ্রীষ্টের
জন্মের আনুমানিক ৭০০ বছর আগে, প্রবক্তা ইসাইয়ার মাধ্যমে
স্বয়ং ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন যে, খ্রীষ্ট যখন পৃথিবীতে
আসবেন, তখন তিনি তাঁর আপন জাতীর মানুষের দ্বারা
প্রত্যাখ্যাত হবেন এবং তাদের হাতে নির্যাতিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিজের প্রাণ বিসর্জন
দিতে হবে। এটা ছিল সমগ্র মানবজাতির পরিত্রাণের ঐশ পরিকল্পনা। ইসাইয়ার গ্রন্থ অধ্যায় ৫১ তে এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা আছে। একদিন প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের ঐ ব্যাপারেই কথা বলছিলেন কিন্তু সাধু পিটার তাঁর
ঐ কথা শুনে অনুযোগ করেছিলেন। আর এটাই ছিল তাঁর প্রথম ভুল।
এই সময় থেকেই যীশু তাঁর শিষ্যদের বোঝাতে লাগলেন যে, তাঁকে জেরুসালেমে যেতে হবে আর সেখানে প্রবীণদের হাতে, প্রধান যাজকদের ও শাস্ত্রীদের হাতে তাঁকে বহু যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে; তাঁকে নিহত হতে হবে, তারপর তৃতীয় দিনে তাঁকে পুনরুত্থিতও হতে হবে। তখন পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করতে লাগলেন। তিনি বললেনঃ “প্রভু, ঈশ্বর করুন, আপনার অমনটি যেন কখনো না হয়! না না, অমনটি আপনার ঘটবেই না!” কিন্তু যীশু তখন ফিরে দাঁড়িয়ে পিতরকে বললেনঃ “আমার সামনে থেকে দূর হও, শয়তান! তুমি আমার পথের বাঁধা! তোমার এই যে ভাবনা, এ তো মানুষেরই ভাবনা, ঈশ্বরের তো নয়!”। (মথি ১৬:২১-২৩) আরও দেখুনঃ [মার্ক ৮:৩১-৩৩; লুক ৯:২২]
গ্রীক পাঠঃ
[ἀπὸ τότε ἤρξατο ὁ ἰησοῦς δεικνύειν τοῖς μαθηταῖς αὐτοῦ ὅτι δεῖ αὐτὸν εἰς ἱεροσόλυμα ἀπελθεῖν καὶ πολλὰ παθεῖν ἀπὸ τῶν πρεσβυτέρων καὶ ἀρχιερέων καὶ γραμματέων καὶ ἀποκτανθῆναι καὶ τῇ τρίτῃ ἡμέρᾳ ἐγερθῆναι. καὶ προσλαβόμενος αὐτὸν ὁ πέτρος ἤρξατο ἐπιτιμᾶν αὐτῶ λέγων, ἵλεώς σοι, κύριε· οὐ μὴ ἔσται σοι τοῦτο. ὁ δὲ στραφεὶς εἶπεν τῶ πέτρῳ, ὕπαγε ὀπίσω μου, σατανᾶ· σκάνδαλον εἶ ἐμοῦ, ὅτι οὐ φρονεῖς τὰ τοῦ θεοῦ ἀλλὰ τὰ τῶν ἀνθρώπων.]
সাধু পিটারের
কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মনে হতে পারে যে, তিনি তাঁর প্রিয় প্রভুর আসন্ন যন্ত্রণাময় মৃত্যুর কথা ভেবেই ঐ কথাগুলি বলেছিলেন। প্রভুকে ভালবাসেন বলেই তিনি তাঁর মৃত্যু চান নি। কিন্তু মানবজাতির পরিত্রাণের
জন্য স্বয়ং ঈশ্বর নিজে যা নির্ধারিত করে রেখেছেন, তা বদলে দেবার মতো ক্ষমতা কোন মানুষের আছে কি? তাই সাধু পিটারের বক্তব্য আপাত দৃষ্টিতে ভালো বলে মনে হলেও, তা আসলে পরিত্রাণের বাঁধা। যীশু খ্রীষ্ট জন্মেই
ছিলেন নিজের প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার জন্য। সেটা না হলে যে গোটা মানবজাতি কবেই
অতল গহ্বরে তলিয়ে যেত। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের কথা বা চিন্তা ভাবনা যতই ভালো হোক না কেন, তা যদি ঈশ্বরের পরিকল্পনার বাইরে হয়, তবে সে সবই অর্থহীন।
২) নিজের খ্রীষ্টবিশ্বাসের উপর দৃঢ় ভরসা রেখে অন্যদের বিশ্বাসকে ছোট করে দেখা
কথাতেই আছে, Confidence ভালো কিন্তু Over Confidence ভালো নয়। ঠিক সেটাই করে বসেছিলেন সাধু পিটার। প্রভুর প্রতি তাঁর ভালোবাসা নিয়ে কোন
প্রশ্নই ওঠে না। অথচ সেই ভালবাসাই একসময় তাঁর আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে অন্ধ
করে দিয়েছিল এবং তিনি ঈশ্বরের ভবিষ্যৎবাণীকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছিলেন। সেই রাতে শত্রুদের হাতে
নিজেকে তুলে দেওয়ার আগে, প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের
সাথে ‘শেষ ভোজে’ বসেছিলেন। তা শেষ হওয়ার পর, তিনি বলছিলেন ঐ রাতে কি ভাবে তাঁর শিষ্যরা তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। এবং সে কথা পবিত্র শাস্ত্রে বহুকাল আগে থেকেই উল্লেখ করা আছে। কিন্তু তখনই সাধু পিটার সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠলেন, তিনি তেমনটি কিছুতেই করবেন না। এমনকি যদি তাঁকে তাঁর প্রভুর সঙ্গে মরতেও হয়, তিনি সেটা করতেও দুবার ভাববেন না। কিন্তু প্রভু যীশু তাঁকে উত্তরে বলেছিলেন, সাধু পিটার ঠিক তাঁর উল্টোটাই করে বসবেন।
যীশু এই সময় তাঁদের বললেনঃ “আমার জন্য আজ রাত্রে তোমাদের সকলেরই কিন্তু স্খলন হবে। কারণ শাস্ত্রে তো লেখাই আছেঃ ‘প্রভু মেষপালককে আঘাত করবেন আর পালের মেষগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।’ কিন্তু পুনরুত্থিত হবার পর আমি তোমাদের আগেই গালিলেয়ায় যাবো।” এতে পিতর বলে উঠলেনঃ “আপনার জন্য অন্য সকলে স্খলিত হলেও আমি কিন্তু কখনো স্খলিত হবো না!” যীশু তাঁকে বললেনঃ “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, তুমি যে আমারই একজন, এই রাত্রেই মোরগ ডাকবার আগেই তুমি সে কথা তিন-তিনবার অস্বীকার করবে!” পিতর তখন উত্তর দিলেনঃ “না, আপনার সঙ্গে যদি আমাকে মরতেও হয়, তবুও আমি যে আপনারই একজন, তা আমি কখনো অস্বীকার করবো না!” বাকি শিষ্যেরাও সবাই একই কথা বললেন। (মথি ২৬:৩১-৩৫) আরও দেখুনঃ [মার্ক ১৪:২৭-৩১, লুক ২২:৩৩-৩৪,৩৯; যোহন ১৩:৩৭-৩৮]
গ্রীক পাঠঃ
[τότε λέγει αὐτοῖς ὁ ἰησοῦς, πάντες ὑμεῖς σκανδαλισθήσεσθε ἐν ἐμοὶ ἐν τῇ νυκτὶ ταύτῃ, γέγραπται γάρ, πατάξω τὸν ποιμένα, καὶ διασκορπισθήσονται τὰ πρόβατα τῆς ποίμνης· μετὰ δὲ τὸ ἐγερθῆναί με προάξω ὑμᾶς εἰς τὴν γαλιλαίαν. ἀποκριθεὶς δὲ ὁ πέτρος εἶπεν αὐτῶ, εἰ πάντες σκανδαλισθήσονται ἐν σοί, ἐγὼ οὐδέποτε σκανδαλισθήσομαι. ἔφη αὐτῶ ὁ ἰησοῦς, ἀμὴν λέγω σοι ὅτι ἐν ταύτῃ τῇ νυκτὶ πρὶν ἀλέκτορα φωνῆσαι τρὶς ἀπαρνήσῃ με. λέγει αὐτῶ ὁ πέτρος, κἂν δέῃ με σὺν σοὶ ἀποθανεῖν, οὐ μή σε ἀπαρνήσομαι. ὁμοίως καὶ πάντες οἱ μαθηταὶ εἶπαν.]
প্রবক্তা
জাখারিয়ার গ্রন্থে লেখা আছেঃ
“ওহে তলোয়ার, এবার আমার মেষপালকের, আমার এই কাছের মানুষটির বিরোধিতা করতে উদ্যত হও! এ কথা শোনাচ্ছেন স্বয়ং বিশ্বপতি প্রভু। মেষপালককে আঘাত করো তুমি, পালের মেষগুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক! এবার যত শাবকের গায়ে হাত তুলবো আমি।” (জাখারিয়া ১৩:৭)
প্রবক্তা
জাখারিয়ার মাধ্যমে প্রভু ঈশ্বর এই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যীশুর মানবজন্মের আনুমানিক
৫৪০ বছর আগে। সেই কথাটাই তিনি সেদিন রাতে তাঁর শিষ্যদের
কাছে তুলে ধরেছিলেন। শাস্ত্রের কথাই সত্যি হবে। সাধু পিটারের এটা বোঝা
উচিত ছিল যে, ঈশ্বরের বাণীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে
তিনি নিজের উপর বড় পরীক্ষা ডেকে আনলেন। কারণ শাস্ত্রের কথা বাতিল করা যায়না। ঈশ্বরের শ্রীমুখ নিঃসৃত বাণী, নিজের কাজ না করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকে
না। পরবর্তীতে তার প্রতিফল সাধু পিটারকে পেতে হয়েছিল। অবশ্য প্রভু যীশু শেষে তাঁকে শান্তনা দিয়েছিলেন। আমাদের শিক্ষা নেওয়া
উচিত যে, একজন খ্রীষ্টান, সে তার নিজের উপর যতই আত্মবিশ্বাস রাখুক না কেন, প্রভুর প্রতি তার বিশ্বাস যতই দৃঢ় হোক না কেন, তেমন পরিস্থিতি সামনে উপস্থিত হলে তারও পতন ঘটতে পারে। তেমন পরিস্থিতিতে সে যীশুকে মানুষের সামনে, সমাজের সামনে নিজের প্রভু বলে চিনতে অস্বীকারও করতে পারে। এমন মানুষের উদাহরণ আমাদের সমাজে অনেক আছে। অন্য খ্রীষ্টান যদি তাদের বিশ্বাসে দুর্বলও হয়, নিজের বিশ্বাস শক্তপোক্ত থাকলেও, তাদের যে পতন ঘটতে পারে, বা তারা যে যীশুকে অবহেলা
করবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়।
৩) সময় মতো প্রার্থনা না করা
একজন খ্রীষ্টান প্রার্থনা ছাড়া খ্রীষ্টান হতে পারে না। যেমন একজন সৈনিক অস্ত্র ছাড়া সৈনিক হতে পারে না। প্রার্থনা হল একটি আধ্যাত্মিক অস্ত্র। প্রার্থনার মাধ্যমে একজন মানুষ প্রভুর কাছ থেকে সব রকমের সাহায্য পায়। সঙ্কটের সময়ে মনোবল ও প্রলোভনের সময় তা জয় করার মতো শক্তি মানুষ লাভ করে। কিন্তু সাধু পিটার, যখন তার প্রার্থনা করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল, তখন সে তা করে নি।
তারপর ফিরে এসে তিনি দেখলেন, শিষ্যেরা ঘুমিয়ে রয়েছেন। পিতরকে তিনি বললেনঃ “সিমোন, তুমি কি ঘুমচ্ছো? এক ঘণ্টাও জেগে থাকতে পারলে না! তোমরা জেগে থাকো আর প্রার্থনা করো, যাতে প্রলোভনে না পড়। মনে উৎসাহ আছে বটে, কিন্তু রক্তমাংসের মানুষ যে বড় দুর্বল!” (মার্ক ১৪:৩৭-৩৮) আরও দেখুনঃ [মথি ২৬:৩৬-৪৬, লুক ২২:৩৯-৪৬]
গ্রীক পাঠঃ
[καὶ ἔρχεται καὶ εὑρίσκει αὐτοὺς καθεύδοντας, καὶ λέγει τῶ πέτρῳ, σίμων, καθεύδεις; οὐκ ἴσχυσας μίαν ὥραν γρηγορῆσαι; γρηγορεῖτε καὶ προσεύχεσθε, ἵνα μὴ ἔλθητε εἰς πειρασμόν· τὸ μὲν πνεῦμα πρόθυμον ἡ δὲ σὰρξ ἀσθενής.]
প্রভু যীশু
আমাদের সকলের সামনে এক কঠিন বাস্তব তুলে ধরেছেন, “রক্তমাংসের মানুষ বড় দুর্বল!” মানুষের এই দুর্বলতা
প্রভু ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়, বরং ঈশ্বরের প্রতি মানুষের
অবাধ্যতার ফল। ভবিষ্যতে কি কি ঘটবে সে কথা জেনেই প্রভু যীশু সাধু পিটারকে
তাঁর সঙ্গে জেগে থেকে অন্তত এক ঘণ্টা প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। প্রভু যীশু সত্যিই তাঁর জন্য চিন্তিত ছিলেন। কারণ প্রভু তাঁকে ভালইবাসতেন, তিনি চাননি সাধু পিটারের স্খলন ঘটুক এবং তিনি বিশ্বাসের পথ থেকে
দূরে সড়ে যান। কিন্তু গেৎসীমানি বাগানে যীশু মর্মবেদনার সময় একাই জেগে
ছিলেন, কিন্তু তার কাছের মানুষ সাধু পিটার
ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়, যে কোন পরিস্থিতে আমাদের সর্বদাই প্রার্থনা উচিত। এমনকি তখনও, যখন আমাদের প্রার্থনা করতে ভালো লাগে
না। আত্মার পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনার অন্য কোন আর বিকল্প
হয়না। একজন খ্রীষ্টান যখন প্রার্থনা করে, সে নিজেকেও রক্ষা করে এবং নিজের সঙ্গে অন্যদের জীবনকেও
আসন্ন বিপদের হাত থেকে বাঁচায়। একজন খ্রীষ্টান যদি প্রার্থনা করা বন্ধ
করে দেয়, তাহলে জগত সংসারের সমস্ত প্রলভন ও মন্দ
চিন্তাভাবনা তাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরবে। আরও একটি বিষয় হল, আমাদের পৃথিবীতে শয়তান ও অন্যান্য পৈশাচিক আত্মার শক্তি
ভীষণ ভাবে সক্রিয় রয়েছে। অন্ধকারের শক্তি অনবরত আলোর সন্তাদের
সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। কিভাবে তাদের পতন ঘটানো যায়, কিভাবে তাদের পাপের পথে নিয়ে আসা যায় এবং কিভাবে তাদের আত্মার বিনাশ ঘটানো যায়; তেমনটাই এই অন্ধকার জগতের কার্যকলাপ। ঐ অদৃশ্য পৈশাচিক শক্তির সাথে লড়াই করবার ও তাদের পরাজিত করবার একমাত্র উপায় হল
আমৃত্যু অবিরাম প্রার্থনা করে যাওয়া এবং তার সাথে খ্রীষ্টীয় জীবনে আধ্যত্মিক ভাবে সব
সময় সজাগ সচেতন হয়ে থাকা। যে খ্রীষ্টান তার ব্যাক্তিগত প্রার্থনার-জীবন অবহেলা করে, সেও একদিন সাধু পিটারের মতো যীশুকে নিজের ত্রাণকর্তা প্রভু বলে চিনতে অন্য মানুষের
সামনে অস্বীকার করবেই। প্রার্থনা হল সৃষ্টিকর্তা প্রভুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা। তবে যার সঙ্গে আমরা কথা বলা বন্ধ করে দিই, তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও বিছিন্ন হয়ে যায়।
৪) যীশুকে দূর থেকে অনুসরণ করা
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, সাধু পিটার একটা সময় যীশুকে দূর থেকে অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু যীশুকে দূর থেকে অনুসরণ করার অর্থ কি?
“যারা যীশুকে গ্রেপ্তার করেছিল, তারা তাঁকে মহযাজক কাইয়াফার কাছে নিয়ে গেল; শাস্ত্রীরা ও প্রবীণেরা ইতিমধ্যেই সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। এদিকে পিতর বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে মহাযাজকের প্রাসাদ-প্রাঙ্গন পর্যন্ত যীশুর পিছু পিছু এলেন। ভেতরে ঢুকে, শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা দেখাবার জন্য তিনি প্রহরীদের দলে গিয়ে বসলেন।” (মথি ২৬:৫৭-৫৮) আরও দেখুনঃ [মার্ক ১৪:৫৩-৬৪, লুক ২২:৫৪-৫৫, ৬৬-৭১; যোহন ১৮:১২-১৬, ১৮-২৪]
গ্রীক পাঠঃ
[οἱ δὲ κρατήσαντες τὸν ἰησοῦν ἀπήγαγον πρὸς καϊάφαν τὸν ἀρχιερέα, ὅπου οἱ γραμματεῖς καὶ οἱ πρεσβύτεροι συνήχθησαν. ὁ δὲ πέτρος ἠκολούθει αὐτῶ ἀπὸ μακρόθεν ἕως τῆς αὐλῆς τοῦ ἀρχιερέως, καὶ εἰσελθὼν ἔσω ἐκάθητο μετὰ τῶν ὑπηρετῶν ἰδεῖν τὸ τέλος.]
সাধারণ দৃষ্টিতে
অনেক মানুষের কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক বলে মনে হলেও আসলেই এই অংশের একটি গভীর আধ্যাত্মিক
তাৎপর্য লুকিয়ে আছে। যীশু খ্রীষ্টের একজন প্রকৃত অনুগামী সে কখনই নিজের খ্রীষ্টীয়
বিশ্বাসের জন্য অখ্রীষ্টান মানুষের সামনে ও সমাজের সামনে সে কথা স্বীকার করতে কোন পরিস্থিতিতেই
লজ্জাবোধ করবে না। যীশু খ্রীষ্ট যে বাস্তবেই মানবদেহে
প্রকাশিত সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর, তা প্রচার করতেও সে কারও
সামনে ভয় পাবে না বা দ্বিধাবোধ করবে না। কারণ একজন কাপুরুষ কখনই প্রকৃত খ্রীষ্টান হতে পারে না। প্রভু যীশুকে দূর থেকে অনুসরণ করার অর্থ, যখন একজন খ্রীষ্টান প্রতিকূল ও কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও সাহস হারিয়ে
ফেলে এবং সমাজের সামনে নিজেকে খ্রীষ্টান বলে পরিচয় দিলেও আসলেই সে কিন্তু বিধর্মীদের
মতই জীবনযাপন করে।
৫) অবিশ্বাসীদের সঙ্গে গিয়ে মিশে যাওয়া
এটি হল সব থেকে বড় কারণ যখন একজন খ্রীষ্টান, যীশু খ্রীষ্টকে নিজের প্রভু বলে চিনতে অস্বীকার করে। সাধু পিটার এই ভুলটি করেছিলেন।
“এদিকে পিতর বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে যীশুর পিছু পিছু এসেছিলেন, মহাযাজকের প্রাসাদ-প্রাঙ্গণের ভেতর পর্যন্তই এসেছিলেন। সেখানে তিনি প্রহরীদের সঙ্গে বসে বসে আগুন পোহাতে লাগলেন।” (মার্ক ১৪:৫৪) আরও দেখুনঃ [যোহন ১৮:১২-১৬, ১৮-২৪]
গ্রীক পাঠঃ
[καὶ ὁ πέτρος ἀπὸ μακρόθεν ἠκολούθησεν αὐτῶ ἕως ἔσω εἰς τὴν αὐλὴν τοῦ ἀρχιερέως, καὶ ἦν συγκαθήμενος μετὰ τῶν ὑπηρετῶν καὶ θερμαινόμενος πρὸς τὸ φῶς.]
একজন প্রকৃত
খ্রীষ্টানের পক্ষে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে গিয়ে মিশে যাওয়া ও তাদের সাথে মেলামেশা করাটা
আধ্যাত্মিক ভাবে খুবই বিপজ্জনক। পবিত্র বাইবেলে প্রভু ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে
পবিত্র সন্ধিতে আবদ্ধ সকল মানুষকে বলেছেন, তারা যেন অন্য জাতি ও ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের সাথে অবাধ মেলামেশা না করে, বন্ধুত্বও না করে এবং তাদের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধও যেন
স্থাপন না করেঃ (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩-৪, যোশুয়া ২৩:৭-১৩, এজরা ৯:২-৩,১২-১৫, নেহেমিয়া ১০:৩১,১৩:২৫, তোবিত ৪:১২-১৩, ২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৫)। যখন একজন খ্রীষ্টান কোনও অখ্রীষ্টানের সাথে অবাধে মেলামেশা করতে থাকে, তাদের সাথে গিয়ে মিশে যায়; তখন সে আসতে আসতে পবিত্র খ্রীষ্টীয় পথ থেকে দূরে সরে যায়। এরই সাথে তার আধ্যাত্মিক
ও প্রার্থনার জীবনও নষ্ট হয়ে যায়। তারপর এমন একটা সময় আসে, যখন সে খ্রীষ্টবিরোধী কাজকর্ম করতে শুরু করে এবং সবশেষে সে একদিন ত্রাণকর্তা
যীশুকে নিজের প্রভু চিনতে অস্বীকার করে অন্য পথে চলে যায়। আমরা যেমন ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশা করি, আমাদের আচার আচরণ, স্বভাব চরিত্র তাদেরই মতো হয়ে যায়। মাতালের সাথে মেলামেশা করলে আপনিও একদিন মাতাল হয়ে উঠবেন। ব্যাভিচারির সঙ্গে মেলামেশা
করলে আপনি নিজেও একদিন ব্যাভিচারি মানুষে পরিণত হবেন। এমনটা কিন্তু একদিনে
হয় না, বরং তিলে তিলে হয়। অনেকেই এই প্রশ্ন করে, অবিশ্বাসীরা কি মানুষ
নয়? না কি তারা মন্দ, যার কারণে প্রভু পবিত্র বাইবেলে খ্রীষ্টবিশ্বাসীদেরকে
অন্য ধর্মে ও ভিন্ন জাতির মানুষদের সাথে মেলামেশা করতে বারণ করেছেন? না, প্রকৃত কারণ সেটা নয়! বাস্তবে মানুষ হিসেবে তারা ভালই। কেউই মন্দ নয়। প্রকৃত কারণ হল, তাদের ধর্মীয় উপাসনা ও কার্যকলাপ ঈশ্বরের
দৃষ্টিতে গ্রহণীয় নয়। তারা এমন সব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি পালন করে
থাকে, যা প্রকৃতপক্ষে প্রভুর দৃষ্টিতে অধর্ম। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে পাপ। এছাড়াও ঈশ্বরের প্রতি তাদের অনেক বিকৃত
ও ভুল ধারণা রয়েছে। তারা এমন সব পন্থা অবলম্বন করে ঈশ্বরের উপাসনা করে, যা তাঁর দৃষ্টিতে জঘন্য (প্রজ্ঞা, অধ্যায় ১৩, ১৪ এবং ১৫)। যখন ঐ ধরণের মানুষের সাথে খ্রীষ্টানরা মেলামেশা করতে শুরু করে দেয়, তখন খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক জীবন অশুচি হয়ে পড়ে এবং তারা খ্রীষ্টীয় জীবনের
মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যায়। সাধু পিটার তাদের সাথে গিয়ে মিশে গিয়েছিলেন
যারা যীশুকে ঘৃণা করতো ও তাঁর ধর্মশিক্ষার বিরোধিতা করতো। যার ফলস্বরুপ সাধু পিটারকে বিধর্মীদের সামনে নিজেকে যীশু খ্রীষ্টের একজন শিষ্য
বলে অস্বীকার করতে হয়েছিল।
যীশু খ্রীষ্টের
পথ এই জগতের অন্যান্য ধর্ম ও জাতীর থেকে একেবারেই আলাদা। যখন আপনি যীশুকে অনুসরণ
করবার সিধান্ত নেবেন তখন আপনাকে অনেক বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং অনেক কিছু মেনে চলতেই হবে। খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক সিধান্তগুলির সাথে কোন ভাবেই আপোষ করা চলে না। আপোষ করে নিলে আপনি আর খ্রীষ্টান হয়ে থাকবেন না। তবে দুঃখের বিষয়, সাধু পিটার যে ভুলগুলি করেছিলেন, আজও অনেক খ্রীষ্টান সেই একই ভুলের পুনঃরাবৃত্তি করে চলেছে। আপনি কিন্তু তেমনটি করবেন না। এই নিবন্ধ পড়ে আপনি যে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়গুলি জানতে পেরেছেন সে ভাবেই চলার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনি কখনই এমন
পরিস্থিতে পড়বেন না, যার পর আপনাকে যীশুকে নিজের ত্রাণকর্তা
ঈশ্বর বলে মেনে নিতে অস্বীকার করতে হয়। এ কথা ভুলবেন না, যে কেউ যীশু খ্রীষ্টকে ছেড়ে অন্য পথে পা বাড়ায়, সে ঈশ্বরকেও পায়না এবং নিজের আত্মার পরিত্রাণও পায় না (২ যোহন ১:৯)।