এই ব্লগ সম্পর্কে

    



আপনি যদি “আলো হোক” ব্লগের একজন পাঠক হয়ে থাকেন, তবে আমি আশা করছি ইতিমধ্যেই আপনি আন্দাজ করতে পেড়েছেন এই ব্লগের মূল বিষয়বস্তু কি এবং ব্লগের সমস্ত নিবন্ধগুলির প্রকৃতি কেমন। কিন্তু এখানেই সম্ভবত প্রশ্নের শেষ নয়! আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, যিনি এই ব্লগ পরিচালনা করছেন, তিনি কে? তখন এখানে কয়েকটা কথা আমার বলা প্রয়োজন। যারা এই ব্লগ পড়তে আসেন তাদের সকলের স্বার্থেই সেই কথা বলার প্রয়োজন।

 

 

একটি ছোট কাহিনী

আমার নাম - অভিষেক পিটার। একজন প্রাক্তন হিন্দুধর্মাবলম্বী ( Ex-Hindu)। বর্তমানে একজন খ্রীষ্টান। ২০১০ সালে প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে জানবার পর, খ্রীষ্টধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করতে শুরু করি। বাইবেল, খ্রীষ্টমণ্ডলীর ধর্মশিক্ষা ও খ্রীষ্টমণ্ডলীর প্রাচীন ইতিহাসের উপর ধর্মতাত্ত্বিক ও মৌলিক অধ্যয়ন শেষ করবার পর আমি খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ। এ হল আমার জীবনের সব চাইতে বড় পাওনা। কিন্তু হিন্দু সমাজে থাকি বলে আমাকে বহু প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। কেন আমি জন্মসূত্রে পাওয়া সনাতন হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হয়ে উঠলাম, এই নিয়ে চেনা পরিচিত মানুষ থেকে আরম্ভ করে অনেক অপরিচিত লোকেরাও আমাকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করতে থাকে। মানুষের এই সকল প্রশ্ন এড়িয়ে চলা যায় না। এড়িয়ে চলা উচিতও নয়। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল মানুষের সেই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পালা। কেউ কেউ আমাকে প্রশ্ন করতো খ্রীষ্টধর্মের সম্বন্ধে সত্য জানবার জন্য, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করতো আমার নতুন ধর্মীয় বিশ্বাসকে আক্রমণ করবার ইচ্ছায়। সকলকেই আমি যথাযোগ্য উত্তর দিয়েছি। ভারতবর্ষের হিন্দু জনগণের মধ্যে খ্রীষ্টধর্ম ও খ্রীষ্টানদের ব্যাপারে যে কি পরিমাণ অপব্যাখ্যা প্রচারিত আছে, তা ভাবলে হতাশ হতে হয়। ভারতবর্ষের মধ্যে থাকা বহু হিন্দু সংগঠন খ্রীষ্টধর্মের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভাবে খ্রীষ্টবিরোধী আখ্যান প্রায় বহুকাল ধরে প্রচার করে যাচ্ছে। তারা খ্রীষ্টধর্মকে “ইংরেজদের” ধর্ম বলে হিন্দুদের কাছে তুলে ধরেছে বিভিন্ন ভাবে, নিজেদের সাজানো গল্পে। এমনকি এখানকার বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তকেও খ্রীষ্টধর্মের বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে তার নিন্দা করা হয়েছে। আমি নিজে যখন খ্রীষ্টধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করতে শুরু করলাম, বাইবেল পড়লাম; তখন এ কথা আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, ছোটবেলা থেকে খ্রীষ্টধর্মের সম্বন্ধে হিন্দু সমাজে যা কিছু শুনে বড়ো হয়েছি তার সবকিছুই প্রায় বানানো গল্প আর মিথ্যা কথা। বাস্তব ছিল একেবারেই উল্টো। একটা ধর্মের ব্যাপারে বহুকাল ধরে একটা সম্প্রদায় অপপ্রচার চালাচ্ছে, কুৎসা রটাচ্ছে; কী উদ্দেশ্যে? উদ্দেশ্য একটাই, তাদের নিজেদের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করবার চেষ্টা। ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে খ্রীষ্টীয় শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে অন্ধ করে রাখা। দুঃখের বিষয় হল, ভারতবর্ষের মানুষজন বাস্তব সচেতন নয়। তারা বড্ড বেশী সরল সাধাসিধে আর অন্ধবিশ্বাসী। যা প্রচারিত হয়, তাতেই বিশ্বাস করে বসে। প্রচারিত বিষয়বস্তুর সত্য-মিথ্যা, উৎস-উদ্দেশ্য, এসবের কিছুই তারা যাচিয়ে দেখে না। আজও ভারতবর্ষে খ্রীষ্টান বিরোধী নানান ধরণের প্রচার হয়ে থাকে। এমনকি এই অপকর্মের সঙ্গে জরিত রয়েছে বহু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকগণ। এই সকল প্রচারের কারণে ভারতবর্ষে প্রায়শই খ্রীষ্টানদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। গীর্জা, প্রার্থনা সভা বা খ্রীষ্টান বাড়ীতে কট্টরপন্থী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আক্রমণ করে, আগুন লাগিয়ে দেয়, তাদেরকে প্রাণে পর্যন্ত মেরে ফেলে। সরকার বা পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন একটা সুবিচার পাওয়া যায়না। খ্রীষ্টানরা তাদের আক্রমণকারীদের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করে, তাদের ক্ষমা করে দেয়। এতো অত্যাচার, এতো নির্যাতনের পরেও যীশু খ্রীষ্টের বাণী প্রচার কিন্তু থেমে যায়নি। সত্যসন্ধানী বহু মানুষ দলে দলে এসে নিজের ইচ্ছায় প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে গ্রহণ করে তাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। তারা নিজেরা আশিসধন্য হয়েছে। আবার  অন্যদেরও তাদের সেই আশিসের অংশীদার করে তুলেছে।

 

আমার এই ব্লগ লেখার উদ্দেশ্য

খ্রীষ্টধর্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচার আজও অব্যাহত আছে। আধুনিক যুগের ইন্টারনেট ব্যাবস্থা আর সামাজিক গণমাধ্যমের আবির্ভাবে সেটা আরও ব্যাপক ভাবেই করা হচ্ছে। খ্রীষ্টবিরোধী সেই সকল অপপ্রচারের যথাযোগ্য উত্তর দিতে, এবং যারা এই সব মিথ্যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে তাদের প্রকৃত রূপ মানুষের কাছে তুলে ধরবার উদ্দেশ্যেই আমি এই ব্লগ লেখা শুরু করেছি। খ্রীষ্টধর্মের মূল শিক্ষার বিষয়ে মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া, বাইবেলের বাণীর সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা এবং তার সাথে খ্রীষ্টধর্মের ধর্মতাত্ত্বিক নানান বিষয়ে মানুষের যে সকল প্রশ্ন আছে; সে সকল প্রশ্নের উত্তর আমি এই ব্লগে লিখে প্রকাশ করে থাকি। অন্যান্য আরও বিষয় আছে, যেমনঃ জীবনদর্শন, জীবন শৈলী, নীতি শাস্ত্র বা নৈতিকতা, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, আধ্যাত্মিকতা, ইতিহাস, মনস্তত্ত্ব, সমাজজীবন; এই সমস্ত বিষয় নিয়েও শিক্ষামূলক তথ্য নিবন্ধ লিখে থাকি। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই প্রচেষ্টায় স্বয়ং প্রভু যীশু সহায় থাকবেন। আমার ইচ্ছা, সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, খ্রীষ্টের শাশ্বত বাণী পৌঁছে যাক। যেন সকলেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে চিনতে পারেন। সকলেই যেন তাঁকে মানবদেহে প্রকাশিত ঈশ্বর বলে চিনতে পারেন। যারা আজ নানা ভাবেই তাঁর নামে কুৎসা রটাচ্ছেন তারা সকলেই যেন তাদের অপরাধের ক্ষমা পেয়ে যায়। কারণ যীশু খ্রীষ্ট ছাড়া এই জগতে কারও হাতে মানুষের আত্মাকে পরিত্রাণ করবার ক্ষমতা নেই। জগতের সেই শেষ সময় যখন আসবে, সেই মহাবিচারের দিনে তাদের কেউই রেহাই পাবে না, যারা নিজদের ইচ্ছায়, নিজদের জেদ ও অহঙ্কারে বশবর্তী হয়ে তাদের একমাত্র ত্রাণকর্তা যীশুকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। আর আঁকড়ে ধরে থেকে ছিল মানবসৃষ্ট ধর্ম ও নকল সব দেবতাদের। যিনি এই বিশ্বের মঙ্গলময় সৃষ্টিকর্তা, যিনি সমস্ত জীবের পালনকর্তা ও মালিক, যাঁর হাতে আছে জীবন ও মৃত্যুর চাবি, যিনি একমাত্র উপাস্য, পূজনীয় ও আরাধনার যোগ্য, তিনি ছাড়া আর অন্য কোনও দেবতা নেই, সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ নেই; সেই ঈশ্বর স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কাছে আমি প্রার্থনা করি, যারা এই ব্লগের নিবন্ধগুলির পড়বেন তাদের সকলেরই যেন মনের পরিবর্তন ঘটে, তারা সকলেই যেন খ্রীষ্টের অনুগ্রহ লাভ করতে পারেন। আমেন।