সমস্ত খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি
আলোচনার বিষয়বস্তু। পাঠককে অনুরোধ করছি প্রথম থেকে শেষ অবধি মনোযোগ সহকারে পড়ার
জন্য। আজ অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা প্রকৃত ধর্মশিক্ষার অভাবে এবং পবিত্র বাইবেলে
প্রকাশিত ঈশ্বরের আদেশ বাণীগুলির মর্মার্থ সঠিক ভাবে অধ্যায়ন না করার কারণে, তারা এমন সব
কাজকর্ম করছে ও এমন সব রীতিনীতি পালন করছে যা প্রকৃতপক্ষেই পাপ এবং খ্রীষ্টবিশ্বাস
বিরুদ্ধ। আসলে একজন মানুষ যখনই ঈশ্বরের বাণী লঙ্ঘন করে নিজের মনের ইচ্ছা মতো
জীবনযাপন করতে শুরু করে, তখনই সে আত্মিক ভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়ে সে ভুল পথে চলতে শুরু করে। তার কাছে সেই সময়ে মন্দ বিষয়
ভালো হয়ে ওঠে এবং ভুল বিষয়গুলি তার কাছে সঠিক বলে মনে হয়।
এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই যে অনেক খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের
বিধর্মী বন্ধুবান্ধব আছে এবং অনেকেই আবার বিধর্মীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপন
করেছে, যা পবিত্র
বাইবেলে নিষেধ করা আছে...(দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩-৪, যোশুয়া ২৩:৭-১৩, এজরা ৯:২-৩,১২-১৫, নেহেমিয়া ১০:৩১,১৩:২৫, তোবিত ৪:১২-১৩, ২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৫)। তাদের সাথে মেলামেশা করা, একসাথে
খাওয়া দাওয়া করা, ঘোরা বেড়ানো বা ওঠা বসা; এইসব চলতেই
থাকে। এখন এই অবস্থায় কোনও খ্রীষ্টবিশ্বাসীর পক্ষে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস সঠিক
ভাবে মেনে চলা ও বিশুদ্ধ ভাবে খ্রীষ্টীয় জীবন যাপন করা কোনও মতেই সম্ভব নয়। বরং
সে ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়বে ও বিভিন্ন পাপকাজে লিপ্ত হবে...(যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৫-১৬)।
বর্তমানে অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুবান্ধব এবং চেনা
পরিচিত ঘনিষ্ঠজন আছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের দেবদেবীর ধর্মীয় উপসনা ও পূজায়
বিভিন্ন রকমের খাদ্য, ফল ও মিষ্টি উৎসর্গ করে থাকে। পূজার শেষে তারা সেই
সকল খাদ্যকে ‘প্রসাদ’ রূপে গ্রহন করে তা খেয়ে থাকে।
শুধু তাই নয়, সেই ‘প্রসাদ’ তারা নিজেদের চেনা পরিচিত মানুষ
এবং পাড়া প্রতিবেশীদেরও দিয়ে থাকে। তাদের বিশেষ কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ও পূজায় ‘ভোগ’ রান্নাও করা
হয়। এখন যদি কোনও খ্রীষ্টবিশ্বাসী, তার চেনা পরিচিত কোনও হিন্দু
ধর্মাবলম্বীর কাছ থেকে সেই প্রসাদ কিংবা ভোগ গ্রহণ করে সেটা খায় বা খেতে যায়, তাহলে সে পাপ
করে! এই পাপটা এতটাই গুরুতর যে, এর ফলে একজন খ্রীষ্টবিশ্বাসীর
যীশুর সাথে আত্মিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় এবং সে নিজেই নিজের উপর অজানা বহু
অভিশাপ ডেকে নিয়ে আসে, যা পরবর্তী সময়ে তার জীবনে কার্যকর হয়ে ওঠে। অথচ
অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসী এই বিষয়ে কিছুই জানে না। এবার আসুন, পবিত্র
বাইবেলে এ বিষয়ে কী বলা হয়েছে আমরা তা জেনে নিই।
“ইস্রায়েলের লোকেরা যখন শিত্তীমে বসবাস করতো, তখন তারা মোয়াবের মেয়েদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল। মোয়াবীয় দেবতাদের উদ্দেশ্যে যে সব বলি উৎসর্গ করা হতো, সেই মেয়েরা তেমন অনুষ্ঠানে ইস্রায়েলীয়দের নিমন্ত্রণ জানাতে লাগলো। লোকেরা তখন তাদের যজ্ঞভোজে যোগ দিতে লাগলো এবং ওই মেয়েদের দেবতার পূজাও করতে লাগলো। ইস্রায়েলীয়রা তখন বায়াল পেয়োরের অনুরাগী হয়ে উঠলো, ফলে প্রভু তাদের উপর ক্রুদ্ধই হলে। প্রভু তখন মোশীকে বললেন : “ওদের নেতাদের ধরে এনে আমার সামনে প্রকাশ্যেই শূলে চড়াও, যাতে ইস্রায়েলের প্রতি আমার জ্বলন্ত ক্রোধ প্রশমিত হতে পারে।” (গণনা পুস্তক ২৫:১-৪)
“কিন্তু এই জ্ঞান সকলের নেই। মূর্তিপূজা করার দীর্ঘ অভ্যাসের জন্যে কেউ কেউ আজও দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যকে প্রসাদ বলেই গ্রহণ করে এবং তাতে তাদের বিবেক, অপরিণত ব'লে, কলুষিতই হয়। বলাই বাহুল্য, কোনও খাদ্য আমাদের কখনো ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাইয়ে দিতে পারে না। তা না খেলেও কোনও ক্ষতি নেই, আবার খেলেও কোনও লাভ নেই।” (১ করিন্থীয় ৮:৭-৮)
“স্বয়ং পবিত্র আত্মা এবং আমরা নিজেরাও স্থির করেছি যে, আপনাদের ওপর আর কোনো নিয়মের ভার চাপানো না হয়, শুধু এই কয়েকটি অবশ্য পালনীয় নিয়ম ছাড়া : আপনারা দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা কোনো খাদ্য যেন গ্রহণ করবেন না।” (শিষ্যচরিত ১৫:২৮-২৯)
“এখানে আমি কী বলতে চাই ? আমি কী এই কথাই বলতে চাই যে, দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য বিশেষ কিছু ? কিংবা, ওই দেবমূর্তিটাই বিশেষ কিছু ? না, মোটেই তা নয় ! বরং আমি বলতে চাই যে, বিধর্মীরা যে সব বলি বা খাদ্য উৎসর্গ করে, তা করে ঈশ্বরের কাছে নয়, বরং অপদূতদেরই কাছে! আর আমি তো চাই না যে, অপদূতদের সঙ্গে তোমাদের কোনও সংযোগ থাকুক! তোমরা প্রভুর পাত্র থেকেও পান করবে, আবার অপদূতদের পাত্র থেকেও পান করবে, তা হতে পারে না। প্রভুর ভোজন মেজে রাখা খাদ্যের অংশভাগী হবে, আবার অপদূতদের ভোজন মেজে রাখা খাদ্যেরও অংশভাগী হবে, তা হতেই পারে না!” (১ করিন্থীয় ১০:১৯-২১)
“...তোমাদের ওখানে এমন কয়েকজন আছে, যারা বালায়ামের অপশিক্ষা মেনে চলে। এই বালায়ামই তো একদিন বালাককে ইস্রায়েলীয়দের এমন ভাবে প্ররোচিত করেছিল, যাতে তারা দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য গ্রহণ করে এবং অবৈধ সংসর্গে লিপ্ত হয়ে পড়ে।...তাই বলছি, মন ফেরাও তুমি! নইলে আমি কিন্তু শীঘ্রই তোমার কাছে আসব, আমার মুখের তলোয়ারটা দিয়ে ওই লোকগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু ক'রে দেব..।” (প্রত্যাদেশ ২:১৪-১৬)
“...ওই মেয়েটা আমার সেবকদের অপশিক্ষ দিয়ে এমন ভাবেই ভোলাচ্ছে যে, তারা অবৈধ সংসর্গে লিপ্ত হয়ে পড়ছে, দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যও গ্রহণ করছে।...জেনে রাখো, আমি কিন্তু ওকে এবার ফেলে দেব রোগশয্যায়... (প্রত্যাদেশ ২:২০,২২)।”
উপরে উল্লেখিত বাইবেলের অংশগুলি পড়ে, আশা করি আপনি
নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা যে কোনও খাদ্য গ্রহন করা
বা খাওয়া, খ্রীষ্টানদের পক্ষে দুইই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক
ও ধর্মবিরুদ্ধ।তাহলে এই বিষয়ে আমাদের, অর্থাৎ
খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের কি সতর্ক হওয়া উচিত নয় ? তবুও অনেক খ্রীষ্টবিশ্বাসী, দেবমূর্তির
কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য গ্রহণ করা ও খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন অযৌক্তিক কারণ
দেখিয়ে থাকে। এবং তারা যে কোনও অন্যায় বা পাপ কাজ করছে না, সেটা তারা
বোঝানোর চেষ্টা করে।
যেমন ধরুন, কেউ কেউ বলে : “আমি তাদের (বিধর্মীদের) মনে কোনও
দুঃখ দিতে চাইনি। তাই প্রসাদ খেয়েছি।” আপনি অন্যের দুঃখের কথা ভেবে
ঈশ্বরের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। অথচ ঈশ্বর যে অসন্তুষ্ট হচ্ছেন সে বিষয়ে আপনার
কিছুই যায় আসে না। কারণ আপনার চোখে ঈশ্বরের চাইতে মানুষ বড় হয়ে উঠেছে। আপনি
কাকে সন্তুষ্ট করতে চান ? মানুষকে না কি ঈশ্বরকে ? কে আপনার
পরিত্রাণ করতে পারে ? মানুষ না ঈশ্বর ?
আবার কেউ বলে : “আমি প্রসাদ নিয়েছিলাম কিন্তু সেটা খাইনি!” এতে কি
প্রমাণিত হয় ? এটাই কি প্রমাণিত হয়না যে, আপনি একজন
ভন্ড মানুষ ? আপনি যেখানে জানেন এটা পবিত্র
বাইবেলে নিষেধ করা হয়েছে, তারপরেও যখন আপনি দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য
বিধর্মীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন, তখন তাকে আপনি এই শিক্ষাই কি
দিচ্ছেন না যে, খ্রীষ্টবিশ্বাসীরাও দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাবার - ‘প্রসাদ’ খেতে পারে ? এই
বিধর্মীটির অন্তরে এই ভুল শিক্ষাটি কে প্রবেশ করিয়ে দিল ? আপনিই কি নন ? অতএব, ওই মানুষটির
আধ্যাত্মিক পতনের জন্য আপনিই কিন্তু দায়ী হলেন। এর হিসেব আপনাকে একদিন দিতে হবে।
আবার কেউ বলে : “আমি ওটা প্রসাদ মনে করে গ্রহণ করিনি। খাদ্য মনে করেই
গ্রহণ করেছি।” বিষয়টি একই সাথে হাস্যকর ও মর্মান্তিক। একবার ভেবে দেখুন, এই কাজের
জন্য আপনি কি প্রভুর কাছ থেকে আশীর্বাদ পাবেন ? যদি আপনি জলকে দুধ মনে করে পান
করেন, তাহলে হলে কি
সেটা দুধ হয়ে যায় ? মানুষ কি মনে ক'রে কোনটা গ্রহণ করে, তাতে সেটার
নিজস্ব স্বভাব ও সত্ত্বা পাল্টায় না। না পাল্টায় তার কার্যকারিতা।
দেখুন, বিধর্মীরা তাদের পূজায় দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য প্রসাদরূপে গ্রহণ করতেই পারে। সেটা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপার। এই বিষয়ে তাদের সেই ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। কিন্তু কথাটা হলো, খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা যেন দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য গ্রহণ করা থেকে যেন দূরে থাকে। কেন না এটা খ্রীষ্টবিশ্বাসের ধর্মীয় বিষয়। যখন কোনও বিধর্মী মানুষ, সে আপনার চেনা পরিচিত হোক বা না হোক, সে যদি আপনাকে পূজা উপলক্ষে দেবমূর্তির কাছে উৎসর্গ করা কোন খাদ্য বা ভোগ দিতে আসে, তাকে বুঝিয়ে বলুন আপনি সেটা কেন গ্রহন করতে পারবেন না। তর্কে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু সত্যিটা বলুন। এর ফলে সেই বিধর্মী মানুষটিও সত্যিটা জানতে পারলো আর আপনারও কোনো পাপ হলো না। সর্বশেষে আপনি প্রভুর যীশুর সাক্ষী হয়ে দাঁড়ালেন এবং একজন খ্রীষ্টবিশ্বাসী হিসেবে নিজের যোগ্যতারও পরিচয় দিলেন। তাই দেবমূর্তি ও অনান্য অলীক দেবদেবীর কাছে উৎসর্গ করা খাবার খাওয়া থেকে দুরেই থাকুন। বিশ্বপ্রভু আপনাকে এই বিষয়টি গভীর ভাবে বোঝবার মতো প্রজ্ঞা ও স্বর্গীয় জ্ঞান দান করুন।