খ্রীষ্টানদের যোগব্যায়াম (Yoga) করা কী উচিত?

 






খ্রীষ্টানরা যোগা বা যোগব্যায়াম করতে পারে কিনা, এই প্রশ্নটি আমার কাছে বহুবার এসেছিল। তবে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখার সময় হয়ে ওঠেনি।  এই পৃথিবীতে অনেক মানুষই নিজেকে খ্রীষ্টান বলে দাবী করলেও, তাদের সকলেরই কিন্তু সেই প্রকৃত আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও ধর্মশিক্ষা নেই, যা একজন খ্রীষ্টানের এই পৃথিবীতে সঠিক ভাবে চলতে গেলে থাকা দরকার খ্রীষ্টীয় জীবন হলো অনন্তকালের প্রস্তুতি প্রতিটি দিন তাকে এমন ভাবেই জীবনযাপন করতে হবে যেন সে স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে কিন্তু সকলে এ ভাবে চলে না আজকাল খ্রীষ্টানদের একাংশ যোগব্যায়াম বা Yoga করায় মেতে উঠেছে তাদের দাবী, যোগব্যায়াম নাকি শরীর ও মনের জন্য ভালো এবং এটা নাকি শরীরের জন্য একটা ব্যায়াম এই সকল মানুষের কথা ভেবে আমার দুঃখ হয় ভুল শিক্ষা ও সঠিক খ্রীষ্টীয় জ্ঞানের অভাবে যে সমস্ত কাজ এরা করছে, তা একজন খ্রীষ্টবিশ্বাসীকে কখনো করতে নেই! সেই কারণে মহান ঈশ্বর পবিত্র বাইবেলে বলেছেনঃসদ্জ্ঞানের অভাবে আমার এই জাতীর মানুষেরা এবার চিরনীরব হয়ে যাবে তুমি নিজেই তো সদ্জ্ঞান পরিত্যাগ করেছ…” (হোসেয়া ৪:) খ্রীষ্টানদের একটা বিষয় স্পষ্টভাবেই বোঝা উচিত যে, অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপাসনা ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন পদ্ধতিগুলি কেবলই যে খ্রীষ্টীয় শিক্ষা এবং খ্রীষ্টীয় আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণই নয়, বরং সেগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঈশ্বরের আজ্ঞা বিরোধী এছাড়াও তার মধ্যে লুকিয়ে আছে আত্মিক বিপদ

তাই প্রভুর নামে আমি তোমাদের বলছি, জোর দিয়েই বলছিঃ তোমরা বিধর্মীদের মতো আর জীবনযাপন করো না, তারা শুধুমাত্র অসার ধ্যানধারনায় চালিত! তাদের মনটা তো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে তাদের মধ্যে এমন অজ্ঞতা রয়েছে, তাদের হৃদয় এমনই কঠিন যে, তারা ঐশ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে তাদের বোধশক্তি লোপ পেয়েছে উচ্ছৃঙ্খলতার স্রোতে এমনই গা ভাসিয়েছে তারা যে, অশুচি যত কাজ করতে তারা সর্বদা লোলুপ হয়ে আছে খ্রীষ্টের শিষ্য হয়ে তোমরা তো সেই ভাবে চলতে শেখোনি…” (এফেসীয় ৪:১৭-২০)

 

খ্রীষ্টানদের পক্ষে যোগব্যায়াম (Yoga) করাটা আসলেই যে পবিত্র বাইবেল বিরোধী একটা কাজ এবং তার সাথে এর মধ্যে যে আত্মিক বিপদ জড়িয়ে রয়েছে, সেটা আমি এই নিবন্ধে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো কিন্তু সবার প্রথমে আপনার জানা দরকার যে যোগব্যায়াম আসলে কি, এর উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে এবং এটা করবার উদ্দেশ্যটাই বা কি

 

 

যোগব্যায়াম (Yoga), উৎপত্তি ও ইতিহাস

যোগব্যায়াম বা যোগ হলো প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশ উদ্ভূত শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক সাধনা পদ্ধতি; যা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের আধ্যাত্মিকতা এবং তন্ত্র সাধনার সঙ্গে যুক্তহিন্দুধর্মের দর্শনে, ‘যোগ ছয়টি প্রাচীনতম শাখার একটি অন্য দিকে জৈনধর্মে যোগ মানসিক, বাচিক ও শারীরবৃত্তীয় বিশেষ কিছু কার্যকলাপের সমষ্টি হিন্দুধর্মের দর্শনে যোগের প্রধান শাখাগুলি হল রাজযোগ, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ ও হঠযোগ…[Pandit Usharbudh Arya (1985). The philosophy of hatha yoga. Himalayan Institute Press; 2nd ed.]

এইযোগ’ (Yoga) শব্দটি এসেছে, সংস্কৃত শব্দयोगথেকে এটি সংস্কৃত যুজ ধাতু থেকে ব্যুৎপন্ন, যার অর্থ হলোনিয়ন্ত্রণ করা, “যুক্ত করা বা ঐক্যবদ্ধ করা যোগ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ তাই যুক্ত করা, “ঐক্যবদ্ধ করা, “সংযোগ বা পদ্ধতিযে সকল নারী ও পুরুষযোগঅনুশীলন করেন তাদের যোগীনি ও যোগী বলা হয়ে থাকে

হিন্দু শাস্ত্রঋগ্বেদেপ্রথম যোগ এবং যোগ সম্বন্ধীয় অনুশীলনের উল্লেখ পাওয়া যায়…[ঋগবেদ ১০, ১৩৬] এছাড়াও বেশ কয়েকটি উপনিষদেওযোগশব্দের উল্লেখ করা আছে…[Deussen 1997, p. 556, T. R. S. Ayyangar (1938), The Yoga Upanishads The Adyar Library, Madras] কঠো উপনিষদেপ্রথমযোগশব্দটি অর্থ সমেত উল্লেখ করা আছেএই গ্রন্থে যোগশব্দটির অর্থ বোঝাতে ইন্দ্রিয় সংযোগ ও মানবীয় প্রবৃত্তিগুলির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের মাধ্যমে চেতনার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত লাভ করাকে বোঝায়…[A History of Early Vedanta Philosophy, Philosophy East and West, Vol. 37, No. 3 (Jul., 1987), pp. 325-331.] “যোগ শব্দের মূল অর্থ প্রথম বোঝানো হয়েছে ঋগ্বেদের স্তোত্র ৫.৮১., উদীয়মান সূর্য-দেবতার উপাসনার জন্য যা উৎসর্গ করা হয়েছে সেখানে এটিকে জোয়াল বা নিয়ন্ত্রণ হিসাবে উল্লেখ করা আছে…[Sri Aurobindo (1916, Reprinted 1995), A Hymn to Savitri V.81, in The Secret of Veda, ISBN 978-0-914955-19-1, page 529.] সংস্কৃত ভাষায় যোগব্যায়াম বা যোগসাধনার তত্ত্ব ও অনুশীলনের উপর লিখিত একমাত্র হিন্দু গ্রন্থের নাম হলো পতঞ্জলির যোগসূত্র  খ্রীষ্টপূর্ব আনুমানিক প্রথম শতাব্দীর দিকে, ভারতের ঋষিপতঞ্জলি’, যাকে গোনার্দিয়া বা গণিকাপুত্রও বলা হয়ে থাকে, তিনিই ঐ যোগসসূত্রগুলি লেখেনঋষিপতঞ্জলিতার যোগসূত্রকে চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন, যার মোট ১৯৬ টি উপাখ্যান রয়েছেঃ ) সমাধি পদ {৫১ টি সূত্র} ) সাধনা পদ {৫৫ টি সূত্র} ) বিভূতি পদ {৫৬ টি পদ} ) কৈবল্য পদ {৩৪ টি সূত্র}  

 

যোগ বা যোগ ব্যায়াম করার মূল উদ্দেশ্য

যোগ বা যোগব্যায়াম, হিন্দুশাস্ত্রপতঞ্জলির যোগসূত্রঅনুযায়ী কেবলমাত্র একটি শারীরিক অনুশীলন নয় বরং এটি একটি সামগ্রিক বিস্তৃত আধ্যাত্মিক অনুশীলন যার মূল লক্ষ হলো ব্যাক্তির আত্মার সঙ্গে সার্বজনীন আত্মিক সত্ত্বার মিলন তার সাথে যোগকে আত্ম-উপলব্ধি এবং মুক্তির একটি ব্যাপক পথ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে

 



হিন্দুশাস্ত্র “পতঞ্জলির যোগসূত্র” অনুযায়ী যোগ বা যোগব্যায়ামের উদ্দেশ্যগুলিকে প্রধান চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ

) ইন্দ্রিয় ও মনের নিয়ন্ত্রনঃ ইন্দ্রিয় এবং মনের নিয়ন্ত্রণ করাই হল যোগ বা যোগব্যায়ামের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য এটা ছাড়া যোগ অনুশীলন অর্থহীন যোগশাস্ত্র অনুযায়ী ইন্দ্রিয়গুলিকে প্রায়ই বিভ্রম এবং যন্ত্রণার প্রবেশদ্বার হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেহেতু মানুষের মনকে একটি অস্থির এবং চঞ্চল সত্তা হিসাবে গণ্য করা হয় যোগের অনুশীলনের মাধ্যমে, একজন যোগী/যোগিনী স্ব-শৃঙ্খলা, ফোকাস এবং স্পষ্টতা গড়ে তোলে এবং তারা নিজের ইন্দ্রিয় এবং মনকে গঠনমূলক পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে সক্ষম করে তোলে এই দক্ষতা আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি অনুশীলনকারীদের তাদের অহং-চালিত আবেগকে অতিক্রম করতে এবং আরও উদ্দেশ্যমূলক এবং বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে তাদের সাহজ্য করে

 

) কুণ্ডলিনী চক্রের জাগরণঃ কুন্ডলিনী চক্রের জাগরণ যোগ বা যোগ ব্যায়ামের আরেকটি মূল লক্ষ্য হিন্দুশাস্ত্রপতঞ্জলির যোগসূত্রঅনুযায়ী কুন্ডলিনী চক্র সাপের মতো দেখতে একটি সুপ্ত অথচ শক্তিশালী শক্তি যা মানুষের মেরুদণ্ডের গোড়ায় থাকে এটিকে সমস্ত সৃজনশীলতা এবং সম্ভাবনার উৎস বলে মনে করা হয় প্রাণায়াম এবং ধ্যানের মতো যৌগিক অনুশীলনগুলি শরীরের শক্তি কেন্দ্র চক্রগুলির মাধ্যমে কুন্ডলিনী জাগরণ এবং এর আরোহণকে উদ্দীপিত করে বলে বিশ্বাস করা হয়

 

) আবেগ ও মানসিক সুস্থতাঃপতঞ্জলির যোগসূত্রঅনুযায়ী আবেগ ও মানসিক সুস্থতা যোগব্যায়ামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য যোগব্যায়ামের অনুশীলনকারীরা তাদের আবেগের নিয়ন্ত্রণ এবং রূপান্তর করার জন্য যৌগিক ধ্যান অবলম্বন করেন আসন এবং প্রাণায়ামের বিভিন্ন কৌশলগুলি মানুষের মানসিক ভারসাম্য এবং স্থিতিস্থাপকতাকে উন্নীত করা ও তার সাথে সাথে উত্তেজনা এবং চাপ মুক্ত করতে পারে বলে ধারণা করা হয় ধ্যান আত্ম-সচেতনতা এবং সহানুভূতি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে বলেও মনে করা হয় এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো বৃহত্তর অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং সম্প্রীতি

 

) মোক্ষ অর্জনঃ হিন্দুশাস্ত্রপতঞ্জলির যোগসূত্রঅনুযায়ী যোগের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল মোক্ষ অর্জন, অর্থাৎ পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি এই মুক্তি লাভ করতে হলে অহংবোধের সীমা অতিক্রম করতে হয় এবং তার সাথে সর্বজনীন চেতনার সাথে ব্যক্তিত্বকে একীভূত অবস্থা অর্জিত করতে হয় যোগব্যায়ামের অনুশীলনের দ্বারাতাই মোক্ষ অর্জন করতে হলে, নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করতে হবে বলেই হিন্দুশাস্ত্রে তেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে

 

যোগ বা যোগব্যায়াম হল একটি জটিল এবং বহুমুখী আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা, এবং হিন্দুশাস্ত্র পতঞ্জলির যোগসূত্রতে এর উদ্দেশ্য অনুরূপভাবেও বহুমুখী। যাইহোক, উপরে উল্লিখিত চারটি উদ্দেশ্য যোগব্যায়াম অনুশীলনকারীদের কি কি দিতে পারে তার একটি রূপরেখা টানা হয়েছে। “পতঞ্জলির যোগসূত্রমতে যোগব্যায়াম ব্যক্তিগত রূপান্তর এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী পথ বলেই গণ্য করা হয়

 

[তথ্যসূত্রঃ Easwaran, Eknath. (2004). The Yoga Sutras of Patanjali. Nilgiri Press., Easwaran, Eknath. (1985). The Bhagavad Gita. Nilgiri Press., Swaminathan, S. (2004). Hatha Yoga Pradipika. Yoga Publications Trust., Sivananda, Swami. (2008). Gheranda Samhita. The Divine Life Society.]

 

 





কেন খ্রীষ্টানদের যোগা (Yoga) করা উচিত নয়?

তথ্যসূত্র (Reference) সহ আমি যোগ বা যোগ ব্যায়ামের বিষয়ে যে সকল তথ্য উপরে উপস্থাপন করেছি, তাতে কারও এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, যোগ বা যোগব্যায়াম শুধুমাত্র একটা সাধারণ শরীর চর্চার বিষয় নয় বরং এর সাথে যুক্ত রয়েছে অনেক আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় কার্যকলাপ যা হিন্দুশাস্ত্রপতঞ্জলির যোগসূত্রআমাদের কাছে প্রমাণ করছে এই তথ্যগুলি সম্বন্ধে সকল খ্রীষ্টীয় সন্তান অবগত নয় যার ফলে তাদেরকে ভুল শিক্ষা দিয়ে অবিশ্বাসীরা যোগব্যায়াম করার ফাঁদে ফেলছে এবং শরীরচর্চার নামে তাদেরকে খ্রীষ্টীয় সত্যের পথ থেকে কায়দা করে দূরে সরাচ্ছে

 

যারা খ্রীষ্টে বিশ্বাস করে না, তাদের সঙ্গে কোন রকম সঙ্গতিহীন সম্পর্কের জোয়াল তোমরা নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়ো না! ধর্ম কি কখনো অধর্মের সঙ্গী হতে পারে? অন্ধকারের সঙ্গে আলোর কি কখনো মেলামেশা চলতে পারে? শয়তানের সঙ্গে খ্রীষ্টের কি কখনো একাত্মতা থাকতে পারে? বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে কি কখনো স্বার্থের মিল থাকতে পারে? ঈশ্বরের মন্দির আর ওইসব দেবমূর্তির মধ্যে কি কোন বোঝাপড়া থাকতে পারে? আমরাই তো জীবনময় ঈশ্বরের মন্দির ঈশ্বর নিজেই সে কথা বলেছেন তিনি তো বলেছেনঃ আমি তাদেরই মাঝখানে বাস করবো, তাদেরই মধ্যে করবো নিত্য আনাগোনা আমি তাদের আপন ঈশ্বর আর তারা হবে আমার আপন জাতি” (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৬)

 

পবিত্র বাইবেল আমাদের সাবধান করেছে, আমরা যেন অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সম্পর্কের জোয়াল নিজেদের কাঁধে তুলে না নিইকেন তারা আমাদের সঙ্গে খ্রীষ্টীয় সন্ধি মেনে চলে না যা আসলে সকল মানুষকে পরিত্রাণ এনে দেয়কেন খ্রীষ্টানদের পক্ষে যোগ বা যোগব্যায়াম (Yoga) করা উচিত নয়, তার কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলোঃ

 


) যোগা (Yoga), খ্রীষ্টধর্মের সঙ্গে একেবারেই বেমানান এবং সম্পূর্ণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ

) যোগা (Yoga), খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের প্রাচীন পরম্পরাগত ঐতিহ্যের অংশ নয়

) যোগা (Yoga), পবিত্র বাইবেল বিরোধী একটি অনুশীলন এবং এর মৌলিক শিক্ষার বিপরীত

) যোগা (Yoga), পবিত্র বাইবেলে প্রকাশিত ঈশ্বরের দশ আজ্ঞারমধ্যে প্রথম আজ্ঞাকে লঙ্ঘন করে

) যোগা (Yoga), প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরিত্রায়ী শিক্ষা ও আদর্শের বিপরীত

 

আমরা আগেই জেনেছিলাম যে, সংস্কৃতযোগশব্দের মূল অর্থ হলোজোয়ালঅথবানিয়ন্ত্রণ যারা যোগা অনুশীলন করবে, তারা নিজেদের কাঁধে একটা জোয়াল তুলে নেবে কিংবা তারা কারও নিয়ন্ত্রনে থাকবে তাই যারা এটাকে শুধুমাত্র শরীর চর্চা বা ব্যায়াম বলে যারা আখ্যা দেয়, তারা ভুল করে প্রভু যীশু বলেছেনঃ তোমরা কাঁধে তুলে নাও আমারই জোয়াল, আমারই শিষ্য হও তোমরা; কারণ আমি যে কোমল, বিনম্র-হৃদয় আমিদেখো, পাবে তোমরা প্রাণের আরাম, কেন না জোয়াল আমার সুবহ, বোঝাও আমার লুঘুভার!” (মথি ১১:২৯)   

প্রশ্ন হলো, যোগা বা যোগব্যায়াম মানুষের কাঁধে কেমন ধরণের জোয়াল তুলে দিচ্ছে? কার বা কিসের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তেমন সব মানুষ? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার যারা যোগা অনুশীলন করে, তারা বলবে এর মধ্যে মন্দ কোন কিছু নেই কারণ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী সেটা ঠিক কিন্তু এখানে মূল বিষয়টি হলো, যদি যোগব্যায়াম শুধুমাত্র নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া কিংবা শরীরের সাধারণ ব্যায়াম হত, তবে এতে কোনও সমস্যাই ছিলনা কিন্তু যেহেতু এর মধ্যে আত্মিক সংযোগের ব্যাপার জড়িয়ে আছে, সেহেতু এটা সাধারণ ব্যাপার হতে পারে না কোন হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের কাছেই যোগা সাধারণ শারীরিক চর্চা কিংবা ব্যায়ামের ব্যাপার নয়, বরং আত্মিক জাগরণেরই ব্যাপার যদি কেউ এর উল্টো কথা বলে; তবে বুঝতে হবে হয় সে মিথ্যা কথা বলছে, আর না হয় সে যোগব্যায়াম আসলে কি তা বোঝে না

 

যোগব্যায়ামের স্ট্রেচিং এর আচরণএবং অন্যান্য শারীরিকভঙ্গিগুলি প্রকৃতপক্ষে হিন্দু দেবতা সূর্যদেবের উপসনা ভঙ্গি পশ্চিমা দেশগুলিতে (Western Countries) গিয়ে যোগব্যায়ামের গুরু ও প্রশিক্ষকেরা এই সমস্ত বিষয় স্পষ্ট ভাবে খুলে কথা বলে নাতারা যোগা (Yoga) কে পশ্চিমাদের কাছে এমন ভাবে ও এমন ভাষা ব্যাবহার করে উপস্থাপনা করে, যেন এটা একটা শরীর ও মনকে ভালো রাখবার একটা শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক ক্রিয়াকলাপ ছলচাতুরীর আশ্রয়ে তারা যে এই সব বিষয় বিদেশে গিয়ে প্রচার করছে, এটা সবাই বুঝতে না পারলেও সুবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষ ভালো ভাবেই সেটা বুঝেছে ধরুন, এমন একটা পন্থা ও অনুশীলন হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে উপস্থাপনা করা হলো, তাও আবার এমনই এক সুক্ষ ভাষা ব্যাবহার করে যা প্রকৃত অর্থেই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে মেনে চলা অনুচিত অথচ ভাষা ও বিষয়বস্তু উপস্থাপনার ধারালো চাতুরির কারণে তারা সেটার আসল রূপটা আদৌ ধরতে পারলো নাএমন কাজ করা কি নৈতিক হবে?

 

যোগা বা যোগব্যায়াম করার মূল উদ্দেশ্যই হলো শরীর ও মনের নিয়ন্ত্রণ আয়ত্ত করা যা খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক শিক্ষার বিপরীতে কথা বলে একজন দিক্ষাস্নাত খ্রীষ্টবিশ্বাসী নিজের দেহ, মন, প্রাণ, আত্মা ও সম্পূর্ণ সত্ত্বাকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে থাকে সে আর নিজে নয়, বরং যীশু খ্রীষ্টই তার মধ্যে জীবিত আছে খ্রীষ্টের সঙ্গে আমিও এখন ক্রুশবিদ্ধ হয়ে আছি তাই এই যে আমি জীবিত আছি, সে তো আর আমি নয়; আমার অন্তরে স্বয়ং খ্রীষ্টই জীবিত আছে” (গালাতীয় ২:২০) এখন যাদের অন্তরে বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও অধিপতি স্বয়ং প্রভু বিরাজ করেন, তাদের কি নিজের শরীর ও মনকে যোগব্যায়াম দ্বারা নিজের আয়ত্তে আনার কি কোন প্রয়োজন আছে? মানুষের জীবন মাত্র প্রভু যীশুই নিয়ন্ত্রণ করেন তার জন্ম ও মৃত্যু প্রভু যীশু খ্রীষ্টেরই হাতে (প্রত্যাদেশ ১:১৮) যে কেউ নিজের জীবনকে নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে, সে আসলে নিজেকে নিজের ঈশ্বর বলে ঘোষণা করে অতএব, যোগা করা ব্যাক্তি প্রকৃতপক্ষে তার জীবনে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, আশীর্বাদ ও অনুগ্রহকে অস্বীকার করছে যেহেতু সে যোগব্যায়াম দ্বারা নিজের দেহ ও মনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে চায় এই কারণেই যোগব্যায়াম হলো ঈশ্বরের প্রথম আজ্ঞার বিরুদ্ধে পাপ! একজন ব্যাক্তি যোগব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের জন্য যা অর্জন করতে চাইছে, সে যদি প্রভু যীশুর কাছে সেই বিষয়ে মিনতি জানিয়ে প্রার্থনা করে, তাহলে তাকে সেটা দেওয়াই হবে এমনকি তার চাইতেও তাকে বেশি দেওয়া হবে

 

যোগব্যায়ামের শারীরিক ভঙ্গির (Postures) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিজের মধ্যেকুণ্ডলিনীকে জগিয়ে তোলাএইকুণ্ডলিনীকে ঘুমন্ত সর্পদেবী হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা মানুষের শির দাঁড়ার গোঁড়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকে যোগব্যায়ামের দ্বারা কুণ্ডলিনী কে জাগ্রত করা হয় যাতে তা সেই ব্যক্তির আত্মা, শরীর ও মনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের যোগের প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম চৌধুরী বলেছেন যে,যোগব্যায়ামের ভঙ্গি ক্রমানুসারে যা ঘটে তা হল আপনার কুন্ডলিনী জাগ্রত হয় এবং আপনি যীশু খ্রীষ্ট কিংবা গৌতম বুদ্ধের মতো হয়ে ওঠেন আমার যোগব্যায়ামের ফর্মুলা সবার জন্য কাজ করেএই কুণ্ডলিনী কে তারা শক্তি, দেবতা বা দেবী মনে করলেও, এটা আসলে একটি মন্দশক্তি যা মানুষকে বশীভূত করে ফেলে  

 

স্পষ্ট কথায় বলতে গেলে একজন যোগা (Yoga) করা ব্যাক্তি নিজেই নিজের ঈশ্বর হয়ে ওঠে এবং যা ঈশ্বরের প্রথম আজ্ঞার বিরুদ্ধে ঈশ্বর পবিত্র বাইবেলে বলেনঃআমিই তোমাদের ঈশ্বর এবং আমি ছাড়া আর কোনও দেবতা নেই… (যাত্রাপুস্তক ২০:-) যোগ বা যোগব্যায়াম আসলেই হিন্দু দেবতা, সূর্যদেবের উপাসনার সাথে যুক্ত কোন খ্রীষ্টানের পক্ষে যোগব্যায়াম অনুশীলন করার অর্থ হলো, নিজেকে অলীক দেবতার উদ্দেশ্যে অর্পণ করা একজন ব্যাক্তি এ কথা বলতেই পারেন যে, তিনি যোগব্যায়াম করেন নিজের শরীর কিংবা মনকে ভালো রাখবার জন্য কিন্তু তাতে যোগব্যায়ামের আসল প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়না কেউ যদি জলকে দুধ মনে করে পান করে, তাহলে কি সেটা দুধে পরিণত হবে? জল তো জলই থাকবে!

 

কারও যদি প্রকৃত উদ্দেশ্য শরীর চর্চা করাই হয়, তাহলে সে ব্যাক্তি ব্যায়ামকেন্দ্রে (Gym) ভর্তি হোকব্যায়ামকেন্দ্রের প্রশিক্ষকদের এমন অনেক উপায় জানা থাকে, যা দিয়ে মানুষের শরীর ও মন দুই ভালো করে রাখা যেতে পারে ক্যাথলিক মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ ভাবে যারা মন্দ আত্মার বিতাড়ন করে থাকেন, ইংরেজিতে যাদের Exorcist বলা হয়, এনারা সকল খ্রীষ্টানদের যোগব্যায়াম অনুশীলন করা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন কারণ যোগব্যায়াম খ্রীষ্টানদের মন্দ আত্মার সাথে সংযুক্ত করে দেয় Exorcist রা হলেন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যাজক, যারা অশুভ শক্তি ও মন্দ আত্মাকে পরাজিত করবার শক্তি অর্জন করেন খ্রীষ্টমণ্ডলীর পবিত্র পরম্পরা ও সংস্কার (Sacrament) অনুযায়ীযোগব্যায়াম খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের কে শুধু খ্রীষ্টের থেকেই বিচ্ছিন্ন করে না, বরং তাদেরকে অশুভ শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয় যোগব্যায়াম করার ফলে যে বহুমানুষ মন্দ আত্মা দ্বারা পীড়িত হয়েছে এবং অশুভ শক্তির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে, এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে YouTube সার্চ করলে বেড়িয়ে আসবে অবশ্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ কথা সম্পূর্ণভাবেই অস্বীকার করবে

 

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, যোগা বা যোগব্যায়ামের শরীর আর মনের চর্চার চাইতে, এটি একটি সফল ব্যাবস্যা যা বিগত কয়েক বছরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী বাজারে যোগার (Yoga) আনুমানিক মূল্য ছিল $37.5 বিলিয়ন জানা যায়, সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশী মানুষ যোগব্যায়ামের সাথে যুক্ত বিগত কয়েক বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আমেরিকাতে, যোগব্যায়ামের কেন্দ্রগুলি ও যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষকেরা কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছে যা জানলে আপনার চোখ কপালে উঠবে পশ্চিমা দেশে বর্তমানে এটি একটি সফল ব্যাবসা এমনই তথ্য তুলে ধরেছে statista.com নামের একটি সমীক্ষাকেন্দ্রিক সংস্থা শুধু তাই নয়, ভারতেও যোগার সর্বোচ্চ বাজার মূল্য হলো প্রায় 490 বিলিয়নকেউ যদি চায় অল্প অর্থ বিনিয়োগে একটা যোগাকেন্দ্র (Yoga Center) খুলবে, তবে তার পক্ষে প্রতি মাসে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা কোনও ব্যাপার না   

 

 

সমাপ্তি

সব শেষে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, অন্য ধর্ম ও জাতীর মানুষজন কি করছে, তাদের জীবনযাপনের পন্থা, সেটা খ্রীষ্টানদের অনুকরণ করা উচিত নয়

তোমাদের উদ্দেশ্যে প্রভু যে বাণী এখন উচ্চারণ করছেন, তা শোনো তোমরা! প্রভু এই কথা বলছেনঃ বিজাতীয়দের চলার যে নীতি, তা তোমরা শিখতে যেয়ো না…” (জেরেমিয়া ১০:-)

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তার প্রতি বিশ্বাসী মানুদের পৃথিবীর অন্যান্য জাতীর মানুষের থেকে আলাদা করেই রেখেছে, যাতে আমরা ঈশ্বরের আপনজাতি হয়ে উঠতে পারি

তোমরা তো সংসারের লোক নও, বরং তোমাদের মনোনীত করে সংসার থেকে আমি তোমাদের পৃথক করে রেখেছি…” (যোহন ১৫:১৯)

 

খ্রীষ্টানদের পক্ষে কোন ভাবেই যোগ (Yoga) বা যোগব্যায়াম করা উচিত নয় কারণ এটা হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সরাসরি ভাবেই যুক্ত এই ধর্মগুলি ঈশ্বর, মানুষ, পরকাল ও আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে ধারণা ও বিশ্বাস খ্রীষ্টধর্মের থেকে একেবারেই বিপরীত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় শিক্ষাগুলি পবিত্র বাইবেল বিরোধীএছাড়াও যোগব্যায়ামে মাঝে মাঝে মন্ত্র জপ করবার নিয়ম আছে মন্ত্র হল শব্দ বা বাক্যাংশ যা বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয় হিন্দুধর্মে মন্ত্র উচ্চারণ করা মানেই তা মূর্তিপূজা কিংবা অলীক দেবদেবীর উপাসনার সঙ্গে যুক্ত মানুষের সার্বিক মঙ্গল ও পরিত্রাণ একমাত্র যীশু খ্রীষ্টের হাতে আছে যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং এই সকল বিষয় মানবজাতিকে পরিত্রাণ করবে না শরীর ও মনকে ভালো এবং সতেজ রাখবার উপায় পবিত্র বাইবেলে বলা আছে প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করে চলা, তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করা, মানুষ হিসেবে নিজেদের কর্তব্য ফাঁকি না দেওয়া এবং তার সাথে অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকলে, যোগব্যায়াম বা ধ্যান করবার প্রয়োজন হবে না

 

 

 

 

 

 

     

নবীনতর পূর্বতন