মানসিক অস্বাস্থ ও বিষণ্ণতায় সমাজ মাধ্যমের ভূমিকা
বিষণ্ণতা বা যাকে
আমরা ইংরেজিতে “Depression” বলে জানি, এটা আসলে কী?
বিষণ্ণতা (বা বিষণ্ণতাজনিত ব্যাধি) একটি সাধারণ এবং গুরুতর মানসিক ব্যাধি
যা মানুষের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা, কাজ এবং বাস্তব জীবনকে উপলব্ধি করার উপর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে। বিষণ্ণতা হল একটি মেজাজজনিত ব্যাধি (Mood Disorder) যা দুঃখ, ক্ষতি
বা রাগের অনুভূতি সৃষ্টি করে যা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। এটিকে
আবার মেজর ডিপ্রেশনাল ডিসঅর্ডারও বলা হয়। বিষণ্ণতা ক্রমাগত দুঃখের অনুভূতি । এটি চিন্তাভাবনা,
স্মৃতিশক্তি, খাওয়া এবং ঘুমের ক্ষেত্রেও অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে বর্তমানে বিষণ্ণতা
নিরাময়যোগ্য।
কিছু গণনার অনুমান অনুসারে, প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ [১] বিশ্বজুড়ে ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটগুলি ব্যবহার করেন। এই ব্যবহারের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করতে বাধ্য হয়েছেন যে সমাজ মাধ্যমের বিপুল জনপ্রিয়তা ও ব্যাবহার কি কোন ভাবে বিষণ্ণতায় (Depression) ভূমিকা রাখে? গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সমাজ মাধ্যমে খুব কম সময় কাটান তারা তাদের তুলনায় অনেক বেশি মানসিক ভাবে সুখী, যারা সমাজ মাধ্যমে বেশি সময় কাটান। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে নেতিবাচক আবেগের একটি বিন্যাস তৈরি করতে পারে যা তাদের বিষণ্ণতার লক্ষণগুলিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে এবং ওই লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করে তোলে।
২০২৩ সালের মে মাসে, মার্কিন সার্জন জেনারেল ডঃ বিবেক মূর্তি তরুণদের
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সমাজ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের দিকে জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ
করার জন্য একটি পরামর্শ জারি করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কের
বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমের ব্যবহার জীবনের সন্তুষ্টি হ্রাসের
কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেইসাথে শরীরের চিত্র, ঘুমের সমস্যা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে অতিরিক্ত
উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি করে। মূলত সকল কিশোর-কিশোরী আজকাল কোনও না কোনও ভাবে সমাজ মাধ্যম ব্যবহার করছে। তাই তিনি স্বাস্থ বিশেষজ্ঞ
মহলকে গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়ের উপর আরও গবেষণা করতে বলেছেন। [২]
এটা একটি বাস্তব সত্য যে, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা মৃত্যু বা
আত্মহত্যার কথা নিয়ে চিন্তা করেন, নিজেকে মূল্যহীন বলে মনে করতে পারেন, চরম উদ্বেগ
অনুভব করতে পারেন অথবা ক্লান্তি বা মাথাব্যথার মতো শারীরিক লক্ষণও তার দেখা দিতে পারে।
সাইকোথেরাপি এবং ওষুধ হল বিষণ্ণতার কিছু সাহায্যকারী চিকিৎসা। মোবাইল থেকে দূরে থাকা,
সমাজ মাধ্যমে সীমিত সময় অতিবাহিত করা এবং বাস্তব জীবনে মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে চলা
ও মেলামেশা করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর ফলে মানুষের মধ্যে একাকীত্বের অনুভূতিটা
অনেকটাই কমে আসে।
সমাজ মাধ্যম ও বিষণ্ণতা
নিয়ে কিছু তথ্য
· ২০১৮ সালে প্রকাশিত ল্যানসেটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে
যে যারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ফেসবুক ব্যাবহার করেন, জীবন নিয়ে তাদের হতাশা এবং অসন্তুষ্টির
সম্ভাবনা বেশি থাকে। [৩]
· ২০১৮ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ সমাজ মাধ্যমে যত কম সময় ব্যয় করবে, তার হতাশা এবং
একাকীত্বের লক্ষণ তত কমবে। [৪]
· ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব ফেসবুক ব্যবহারকারী
এই সমাজ মাধ্যমে অন্যদের জীবন দেখে ঈর্ষা অনুভব
করতেন তাদের বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। [৫]
সমাজ মাধ্যম কী মানসিক
অস্বাস্থের সঙ্গে সরাসরি ভাবে জড়িত?
সমাজ মাধ্যম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে
যে সমাজ মাধ্যমের ব্যাবহার এবং বিষণ্ণতার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। অন্য আর এক গবেষণায়
আরও দেখা গেছে যে সমাজ মাধ্যমের ব্যাবহার আসলেই
বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে। ২০১৮ সালে এ নিয়ে “জার্নাল অফ সোশ্যাল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল
সাইকোলজিতে” একটি যুগান্তকারী গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল – “No More FOMO: Limiting Social Media Decreases Loneliness
and Depression”। [4] এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে মানুষ যত কম সমাজ মাধ্যম
ব্যবহার করে, সে তত কম হতাশাগ্রস্ত এবং একাকী বোধ করে। কম সমাজ যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং মানসিক সুস্থতার
মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, এই গবেষণা তা তুলে ধরছে। গবেষকদের মতে, এই গবেষণাটি এমন প্রথম
বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যার দ্বারা সমাজ মাধ্যমের ও মানসিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে যোগসূত্রের
অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই গবেষণার সহ-লেখক জর্ডিন ইয়ং এক বিবৃতিতে বলেছেনঃ “এর আগে, আমরা কেবল এটুকুই বলতে পারতাম যে সমাজ মাধ্যমের ব্যবহারের সঙ্গে মানুষের স্বাস্থের
অবনতির একটি সম্পর্ক রয়েছে,” ।
সমাজ মাধ্যম এবং বিষণ্ণতার মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্য, গবেষকরা
পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৩ জন ছাত্র-ছাত্রীকে দুটি দলে ভাগ করে দেন: একটি
দল সমাজ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে, যে যেভাবে
তারা চায়, যতটা সময় তারা চায়, কিন্তু দ্বিতীয় দলের সমাজ মাধ্যম ব্যবহারের সময় সীমিত
করে দেওয়া হল, তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে মোট ৩০ মিনিট ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের
ব্যাবহার করতে পারবে। [৪]
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ব্যাক্তি সমাজ মাধ্যম ব্যাবহার করার
জন্য আইফোন ব্যবহার করেছিলেন এবং গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের এই গবেষণার সঙ্গে সম্মতি
নিশ্চিত করার জন্য তাদের ফোনের ডেটা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। যে দলটি সীমিত ইন্টারনেট ও
সমাজ মাধ্যম সংযোগ সহ গবেষণার শুরুতে তাদের
হতাশা এবং একাকীত্বের তীব্রতা সম্বন্ধে জানিয়ে ছিল, পরে তারাই গবেষণার শেষে “হতাশা
এবং একাকীত্বের” প্রভাব অনেকটা কমে গেছে বলে দাবী করে। দুটি দলই উদ্বেগ এবং একাকীত্বের
ভয় (FOMO) কমে গেছে বলে জানিয়েছে। এই গবেষণায় যোগদান করা যে দলটিকে অবাধ মোবাইল ও
ইন্টারনেট ব্যাবহার করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা যত খুশি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম
ব্যাবহার করতে পারে, পরে তারা এই বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছিল যে, তারা একটা দীর্ঘ সময় অপচয়
করে ফেলেছে।
কম সমাজ মাধ্যমের
ব্যাবহার, কম FOMO (Fear of Missing Out)
FOMO, বা সকলের থেকে পিছিয়ে থাকার ভয়, এটি এমন এক অনুভূতি বা উপলব্ধিকে
বোঝায়, যখন কেউ মনে করে যে অন্য লোকেরা তার চাইতে জীবনে বেশি মজা করছে, নতুন নতুন
জিনিস জানছে, করছে আর অনেক ভালো জীবনযাপন করছে। দেখা গেছে যারা প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট
সমাজ মাধ্যমে সময় কাটান তারা কম বিষণ্ণতায়
(Depression) ভোগেন। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন যে, সমাজ মাধ্যমে অন্য ব্যাক্তিদের জীবন
যাপনের সুন্দর দৃশ্যগুলি দেখে, যেমনঃ বিদেশে ঘুরতে যাওয়া, সমুদ্র সৈকতে পরিবার বা ভালোবাসার
মানুষের সাথে ছবি তোলা, বা চেনা পরিচিত মানুষের জাঁকজমক করে বিয়ের ছবি ও ভিডিও দেখে,
মানুষ নিজেদের জীবনকে মূল্যহীন বলে মনে করে। এই ধরণের মানুষ নিজেদের দুর্ভাগা বলে মনে
করেন। কারণ তারা ক্রমাগত নিজেদের জীবনের সাথে, সমাজ মাধ্যমে দেখা অন্যদের ঝাঁ চকচকে
জীবনযাপনের সুন্দর সুন্দর ছবি আর ভিডিও দেখে নিজের সঙ্গে তুলনা করতে থাকে। বলাই বাহুল্য,
মানুষ ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে তাদের জীবনযাপনের সে সুন্দর সুন্দর ছবি বা ভিডিও পোস্ট
করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলি সমাজ মাধ্যমে
অনুসারী (Followers) আকর্ষণ করবার উদ্দেশ্যেই করা হয়।
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে, তথাকথিত “সুন্দর” জীবনযাপনকারী ব্যক্তিদের
ছবি বা ভিডিও দেখার ফলে সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের একথা মনে হতে পারে যে তারা অন্যদের
যোগ্যতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না। ২০১৫ সালের মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়
দেখা গেছে যে নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা যখন সমাজ মাধ্যমে অন্যদের জীবনশৈলী দেখে
ঈর্ষা অনুভব করেন তবে তাদের বিষণ্ণতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। [৫]
সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা “FOMO” অনুভব করতে পারেন, উদাহরণস্বরূপ,
যদি তার কোন কাছের বন্ধু সমুদ্র সৈকতে কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে তাকে আমন্ত্রণ জানালো
কিন্তু কোনও কারণে সে যেতে পারল না। অথবা তার ওই বন্ধুটি তাকে তাদের সাথে ভ্রমণে যেতে
একবারও অনুরোধ করলো না, এর ফলে সে মনে আঘাত পেতে পারে এবং তার চেনা পরিচিত বন্ধু পরিধির
মধ্যে সে নিজেকে উপেক্ষিত বলে ধরে নিয়ে থাকে। এমন সব ক্ষেত্রে একজন সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারী
অন্যদের সাথে তার বন্ধুত্ব বা তার নিজস্ব আত্মমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। অনেকে
আবার তাদের প্রাক্তন প্রিয় মানুষটির সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে গিয়ে, তার নতুন সঙ্গীর সাথে
ঘোরা বেড়ানো, রেস্তোরায় গিয়ে তাদের এক সাথে খাওয়া কিংবা বিশেষ মুহূর্ত কাটানোর ছবি
দেখেন, তারাও FOMO অনুভব করতে পারেন। তারা হয়তো ভাবতে পারেন যে কেন তাদের প্রাক্তন
প্রিয় মানুষটি তার সাথে সম্পর্কে থাকাকালীন এই কাজগুলি করেনি। পরবর্তী কালে দেখা যায়
যে, এ সমস্ত ব্যক্তিরা নতুন করে আবার সম্পর্কে আসতে দ্বিধাবোধ করেন কিংবা তাদের মধ্যে
বিয়ের প্রতি একটা অনীহার জন্ম নেয়।
সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, একজন ব্যাক্তি যখন সমাজ মাধ্যম ব্যাবহারের
সময় সীমিত করে দেন, তখন তিনি অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করার জন্য কম সময় ব্যয় করেন।
এটি তার মানসিক স্বাস্থের জন্য ইতিবাচক, প্রয়োজনীয় এবং বিষণ্ণতা উৎপন্নকারী লক্ষণগুলি
থেকে তাকে দূরে রাখে।
সমাজ মাধ্যম ব্যাবহারে
অল্পবয়সীদের ঝুঁকি বেশি
সমাজ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের আগে, ছোট ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই
কেবল স্কুল বা পাড়ার মধ্যেই পরপীড়ন (Bully) নিয়ে চিন্তিত থাকত। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের
আবির্ভাবে পরপীড়কদের সামনে অন্যদের নির্যাতন করার একটি নতুন উপায় করে দিয়েছে।
মাত্র একটি ক্লিকের মাধ্যমে, পরপীড়করা তাদের শিকারকে উপহাস, মারধর বা অন্যভাবে
অপমানিত করার একটি ভিডিও প্রচার করতে পারে। লোকেরা আবার সেই সব সমাজ মাধ্যম পৃষ্ঠায়
গিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে বা ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে থাকে। তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা
যায়, পরপীড়নের (Bullying) শিকার ব্যক্তিরা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।
[৬]
যদিও অনেক স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের আচরণ সম্পর্কে পরপীড়ন (Anti
Bullying Policy) বিরোধী নীতি এবং নিয়মগুলি রয়েছে, তবুও শিক্ষক এবং অভিভাবকদের পক্ষে
সমাজ মাধ্যমে সকলের আপত্তিজনক আচরণ পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। আরও খারাপ বিষয় হল, পরপীড়নের
শিকার শিক্ষার্থীরা প্রায়শই ভয় পায় যে, তারা যদি অভিভাবক, শিক্ষক বা প্রশাসকের কাছে
পরপীড়নের সম্বন্ধে কথা বলতে যায়, তবে তাদের উপর আরও অত্যাচার বেড়ে যাবে। এর ফলে একটি
শিশু বা একজন শিক্ষার্থী আরও বেশি বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারে এবং এই ধরণের বিষাক্ত পরিস্থিতি
মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক ও সামাজিক সহায়তা ছাড়াই ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকতে
বাধ্য হয়।
যদি আপনি নিজে বা আপনার প্রিয়জনের কারও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে, তখন দেরী না করেই একজন অভিজ্ঞ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনবিদ বা মানসিক স্বাস্থ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। এবং এর সাথে জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ লাইফলাইনের সাথে যোগাযোগ করুন। যদি আপনি বা আপনার প্রিয়জন তাৎক্ষণিক এই ধরণের বিপদে পড়েন, প্রাথমিক ভাবে প্রাণ রক্ষার স্বার্থে, সেই সময় আপনার চেনা পরিচিত পরিধির মধ্যে থাকা যে কোন ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
খারাপ খবর এবং ‘ডুমস্ক্রোলিং’
এখন অধিকাংশ মানুষ খবর পড়বার জন্য প্রথাগত খবরের কাগজের তুলনায় বিভিন্ন
সমাজ মাধ্যম থেকে দেশ বিদেশের খবর পড়েন। [৭]
সমাজ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা দিনে একাধিক বার লগ ইন করেন
বা সারাটা দিন লগ ইন থাকেন, তাদের কাছে ঘন ঘন বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন খবর আসে,
যার মধ্যে অনেক খারাপ খবরও থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাসী হামলা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
এবং সেলিব্রিটিদের মৃত্যু সম্পর্কিত শিরোনামগুলি প্রায়শই সমাজ মাধ্যমে ট্রেন্ডের শীর্ষে
থাকে। এই ধরণের খবর মানুষের মনে বিষণ্ণতা, দুঃশ্চিন্তা, দুঃখ, ভয়, আতঙ্ক কিংবা মানসিক
উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করে। মানসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের খবর এড়িয়ে যাওয়া ভাল। বিশেষ
করে তাদের জন্য, যারা খুব সামান্য কারণেই দুঃশ্চিন্তা ভোগেন। সমাজ মাধ্যম এবং ইন্টারনেটের
আবির্ভাবের আগে, খারাপ খবরের সংস্পর্শে আসা মানুষের সংখ্যা কিন্তু সীমিত ছিল। সেই সময়ে
মানুষজন দিনের নির্দিষ্ট কোন এক সময়ে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সম্প্রচার বা সংবাদপত্র
থেকে খবর পেত। এখন প্রায় সবসময়ই কোন না কোন মাধ্যম থেকে মানুষের কাছে কিছু না কিছু
খবর আসতেই থাকছে।
সমাজ মাধ্যমে বা অনলাইনে অন্য কোথাও খারাপ খবর ছড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাসকে
“ডুমস্ক্রোলিং” বলা হয় এবং এটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব
ফেলে, যার ফলে উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি বৃদ্ধি করে।
২০১৮ সালে ৯১,০০৫ জনের উপর পরিচালিত “ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি”
গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা ঘুমানোর আগে ফেসবুক ব্যাবহার করেন তাদের “মেজর ডিপ্রেশন
ডিসঅর্ডারে” আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৬% বেশি এবং যারা ভালো ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলেন তাদের তুলনায় এদের মানসিক সুখের মাত্রা ৯% কম। [৩]
মনোবিজ্ঞানী অ্যামেলিয়া আলদ্যাও এনপিআরকে (NPR – National Public
Radio) বলেন যে ডুমস্ক্রোলিং মানুষকে “নেতিবাচকতার দুষ্ট চক্রের” বন্ধনে আবদ্ধ করে
। এই চক্রটি চলতে থাকে কারণ “আমাদের মন আকস্মিক বিপদের সন্ধানে ব্যস্ত পড়ে,”। তিনি
আরও বলেন “আমরা যত বেশি সময় ধরে স্ক্রল করতে থাকি, তত বেশি আমরা সেই বিপদগুলি খুঁজে
পাই, তত বেশি আমরা সেগুলিতে ডুবে যাই, তত বেশি উদ্বিগ্ন হই”। তখন তার কাছে গোটা পৃথিবীটাই
একটি অন্ধকার জায়গা বলে মনে হয়, ডুমস্ক্রোলাররা এই ভাবে ক্রমশ হতাশার মধ্যে ডুবে
যায়। [৮]
সমাজ মাধ্যম ব্যাবহারে
সাবধানতা অবলম্বন
এটা সত্যি যে, সমাজ মাধ্যম ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে,
কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এটি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ বর্তমানে ইন্টারনেটের
যুগে, সমাজ মাধ্যমের ব্যাবহার এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা এই সমস্ত ওয়েবসাইটগুলি
পরিমিতভাবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। সমাজ মাধ্যম ব্যবহার করা সময় একটি টাইমার
সেট করুন অথবা আপনার ফোন বা কম্পিউটারে এমন একটি অ্যাপ ইনস্টল করুন। যা আপনাকে জানিয়ে
দেবে আপনি কতটা সময় ধরে ইন্টারনেট বা মোবাইল ব্যাবহার করছে। যেমন আনড্রোয়েড মোবাইলে
“Digital Wellbeing” নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন ফিচার দেখতে পাওয়া যায়।
এই ধরণের টাইমার বা অ্যাপগুলি ছাড়া, আপনি আপনার অজান্তেই সমাজ মাধ্যমে
ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে ফেলবেন। মোবাইল বা ইন্টারনেটে আপনার সময় সীমিত করার
জন্য, আপনার আশেপাশের পরিবেশ এবং পরিস্থিতির উপর মনোযোগ দিন। পারলে একটি বই পড়ুন,
একটি সিনেমা দেখুন, বেড়াতে যান, কোন খেলার সাথে যুক্ত হোন, অথবা কোনও বন্ধুর সাথে
ফোনে কথা বলুন বা তার সাথে আড্ডা দিন। বাস্তব জীবনে বেশি সময় কাটান । নিজেকে সামাজিক
করে তুলুন। কারণ মানুষ সামাজিক প্রাণী, অন্য মানুষের সাথে প্রকৃত সম্পর্ক তাকে সুস্থ
রাখে।
তথ্যসূত্রঃ
১. https://datareportal.com/reports/more-than-half-the-world-now-uses-social-media
২. “Social Media and Youth Mental Health,” The US Surgeon
General's Advisory, May 2023.
৩. https://www.thelancet.com/journals/lanpsy/article/PIIS2215-0366(18)30139-1/abstract
৪. https://guilfordjournals.com/doi/10.1521/jscp.2018.37.10.751
/ (No More FOMO: Limiting Social Media Decreases Loneliness and Depression)
৫. https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0747563214005767?via%3Dihub