ZoyaPatel

যখন মানুষের জীবন প্রাচ্যের অনাচারে ভরে যায়, তখন ঈশ্বর তাকে একা ফেলে চলে যান!

Mumbai

 


পবিত্র বাইবেলে প্রবক্তা ইসাইয়া এক জায়গায় উল্লেখ করেছেনঃ

 

“তোমার এই জাতির মানুষকে, যাকোব বংশেরই মানুষকে একলা ফেলে চলে গেছ তুমি, কেন না প্রাচ্যের যত অনাচারে ভরা আছে তাদের জীবন; ফিলিস্টিনদের মতোই মানুষের ভাগ্য গণনা করে তারা, বিজাতীয়দের হাতের তালুতে তালুর চাপর দিয়ে কত চুক্তি করে তারা!” (ইসাইয়া ২:৬)

 

বাইবেলের এই অংশটি অন্যান্য কিছু অংশের মতো ইহুদী জাতির ধর্মীয় জীবনের একটি হতাশাজনক ইতিহাসকে তুলে ধরে এবং একই সাথে এটা ধর্মতাত্ত্বিক ভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। শুধু তাই নয়, এর প্রাবক্তিক মূল্যও কিছু কম নয়, যা বর্তমান যুগের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। একটা সময় ইহুদী জাতির মানুষজন চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে মিশর দেশে বসবাস করে ছিল…(আদি পুস্তক ১৫:১৩, যাত্রাপুস্তক ১২:৪১)। তারপর এমন এক সময় আসে যখন ইহুদীরা মিশরীয়দের দাসত্ব করতে শুর করেছিল। তাদের উপর মিশরের রাজা চালিয়ে ছিল নানা বিধ অত্যাচার ও শোষণ। সেই সময় প্রভু ঈশ্বর তাঁর মনোনীত সেবক প্রবক্তা মসী কে পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে এনেছিলেন, তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলাদা একটা দেশে, যেখানে তারা স্বতন্ত্র ভাবেই জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু মুশকিল হল মানুষের নিজের স্বভাব! মানুষ তো অনেক সময়ে নিজেই নিজের শত্রুর ভূমিকা পালন করে। প্রভু ইহুদীদের মিশর থেকে বের করে আনলেও, ইহুদীরা কিন্তু পুরোপুরি ভাবে মিশরকে নিজেদের মধ্যে থেকে বের করতে পারেনি। কথায় আছে, যে মানুষ দীর্ঘকাল ধরে অন্ধকারের মধ্যে বাস করে, একটা সময়ে এসে সে কিন্তু ওই অন্ধকারকেই গভীর ভাবে ভালবেসে ফেলে, তখন আলোর সামনে আসতে সে ঘৃণা বোধ করে। এর পিছনে থাকা মনস্তত্ত্বটি হল, মানুষ যার সাথে বেশি সময় ব্যয় করে, তার প্রতি একটা দুর্বলতা, একটা আকর্ষণ বা একটা আসক্তি তার অন্তরে জন্মে যায়। সেটা ভালো না কী মন্দ, এই চিন্তা তার মাথায় আর আসে না।

 

যে আশীর্বাদের জীবন পাওয়ার জন্য ইহুদীরা মিশর ছেড়ে নতুন দেশে গিয়ে বাস করতে শুরু করেছিল, সেখানে গিয়ে তারা একেবারে অনাচারের পথে চলতে শুরু করলো। তার মধ্যে যে সমস্ত অন্যায় তারা করেছিল, তার মধ্যে ছিল মূর্তিপূজা, অলীক দেবদেবীর উপাসনা, তন্ত্রমন্ত্র সাধন, কালাজাদু, ভাগ্য গণনা, বিধর্মীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা এবং তার সাথে নিজের কোলের শিশুদের ‘মোলেখ’ নামে একটা দেবতার কাছে বলি দেওয়া। এই সবকিছুর কারণে ইহুদীদের ক্ষতি হয়েছিল কিন্তু ভালো হয়নি। এই ভাবে তারা ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। যদিও ঈশ্বর তাদের কে ধর্মের পথে ফিরিয়ে আনতে বহু প্রবক্তা ও অভিষিক্তজনদের পাঠিয়ে ছিলেন, তবুও ইহুদীরা তাদের কথা মান্য করেনি (বারুক ১:২১)। শুধু তাই নয়, ঈশ্বর প্রেরিত অনেক মানুষকে তারা হত্যাও করেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রভু ঈশ্বর তাদের কে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, এবং তাদেরকে নিজেদের কর্মের যোগ্য প্রতিফল ভোগ করতে দিয়েছিলেন। 

 

ধরুন আপনি কাউকে ভালবাসেন। সবসময়ে তারই কথা ভাবেন। তার কিসে ভাল হবে সেই কথাই চিন্তা করেন। তাকে সবসময়ে আপনি আগলে রাখতে চান, আর তেমনই উপদেশ দিয়ে থাকেন যাতে তার মঙ্গল হয়। অথচ এদিকে সে আপনার কোন কথাই গ্রাহ্য করে না, আপনার কোনো ভাল উপদেশই সে কানেই তোলে না! স্পষ্ট কথায়, সেই মানুষটা আপনাকে পাত্তা দেয়না! তখন সেই অবস্থায় আপনি কী করবেন? তার উপর জোর খাটাবেন? নাকি তাকে কড়া ভাষায় কতগুলো কথা শুনিয়ে শাসন করবেন? এ সব কিছু করলেও সেই মানুষটার মধ্যে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে কী? এর উত্তর হলঃ “না!” আমরা কাকে ভালবাসবো তা আমাদের ব্যাক্তিগত সিধান্ত, কিন্তু আমরা যাকে ভালবাসি, সে আমায় ভালবাসবে কিনা, সেটা তার ব্যাক্তিগত সিধান্ত! এটাকেই বলে ভালবাসার যন্ত্রণা। বাস্তবে, প্রকৃত ভালবাসা জন্মায় প্রকৃত স্বাধীনতা থেকে। স্বাধীনতাহীন ভালবাসা আসলে ভালবাসা নয়, বরং এক প্রকার দাসত্ব। আর যেখানেই দাসত্ব আছে সেখানে ভয়ও থাকবে। অথচ পূর্ণ প্রকৃত ভালবাসায় ভয়ের কোনও স্থান নেই…(১ যোহন ৪:১৮)। তাই মানুষ যখন কাউকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালবেসেও বিনিময়ে পায় শুধু অবহেলা বা লাঞ্ছনা; তখন সে বাধ্য হয় সেই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে আসতে। অন্তরে অনেক আঘাত নিয়ে সে তার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক আর যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয়। সে যে রাস্তা নিজের জন্য, নিজের ইচ্ছায় বেছে নিয়েছে; সেই রাস্তায় তাকে সে যেতে দেয়। এটা শুধুমাত্র ওই মানুষটার স্বাধীনতার বিষয় নয়, কিন্তু নিজের আত্মসম্মানেরও বিষয় বটে। আত্মসম্মান হারিয়ে কাউকে ভালবাসা যায়না। আজও পর্যন্ত কেউই তা পারেনি।

 

যীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীতে আসার পর তিনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে মানুষের ধ্যান ধারনা পাল্টে দিয়েছিলেন। ধর্ম ও শাস্ত্রের বিষয়ে ইহুদীদের প্রাচীন অথচ ভুল চিন্তাগুলির নেতিবাচক প্রভাবগুলিও তুলে ধরেছিলেন। ফলে ইহুদীদের মধ্যে প্রভু যীশুকে নিয়ে দেখা দিয়েছিল তীব্র মতভেদ। ইহুদীদের একাংশ প্রভু যীশুকে প্রতিশ্রুত ‘মসীহ’ বা ‘খ্রীষ্ট’ বলে স্বীকার করে নিয়েছিল বটে। কিন্তু ইহুদী সমাজের যাজক ও ফরিসি সম্প্রদায়ের মানুষজন যীশুকে খ্রীষ্ট বলে স্বীকার করতে ছিল নারাজ! ওঁদের মত যে সমস্ত মানুষজন ছিলেন তারাও একই পথে হেঁটেছিল। যদিও প্রভু যীশু নিজের ঐশ পরিচয় নিজের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য, ইহুদী শাস্ত্রবিদদের মধ্যে ‘খ্রীষ্ট’ কেমন হতে পারেন এবং তিনি আসলে কে, তাঁর স্বভাবটাই বা কেমন হবে, এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বহু তর্কবিতর্ক চলতো। যার ফলে ইহুদী সমাজে তাদের ‘প্রতিশ্রুত খ্রীষ্ট’ নিয়ে রহস্যের সীমা ছিল না। প্রভু যীশু স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে, পবিত্র শাস্ত্রে যা কিছু লেখা হয়েছে তার ভুল ব্যাখ্যার কারণেই ইহুদী জাতির এই দুর্দশা। এটা শুধু সেকালের কথা নয়, বর্তমান কালেও কিন্তু এমনটা ঘটে চলেছে। প্রভু যীশু মানুষকে স্পষ্ট ভাবেই জানাতে চাইছিলেন যে, তিনি কোনো সাধারণ ব্যাক্তি নন, বরং মানুষরূপে জন্ম নেওয়া স্বয়ং ঈশ্বর। তিনিই এই মহাবিশ্বের মঙ্গলময় সৃষ্টিকর্তা, তিনিই এই মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ শাসক। ঈশ্বর জ্ঞান হারিয়ে ফেলা মানুষের কাছে তিনি তাদের মতো করে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। যাতে মানুষ তার মানবীয় দুর্বলতার মধ্যে থেকেও যেন ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। অথচ মানুষের একাংশ ঈশ্বরের এই বিনম্র ভাবকে আজও বুঝতে পারে না। তাদের যুক্তিবাদী মন বলে, “ঈশ্বর কেমন করে তাঁর নিজের সৃষ্টির হাতে নির্যাতিত বা ক্রুশে বিদ্ধ হতে পারে?” এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর যুক্তি দ্বারা বুঝে ওঠা কখনই সম্ভব নয়, যদি না একজন মানুষ ‘ভালোবাসা’ এবং ‘বিনম্রতা’ প্রকৃত অর্থ বোঝে।

 

মানুষের স্বভাবের একটি বিশেষ দিক হল, সে যেমন ধরনের মানুষের সাথে মেলামেশা করে, তেমনই হয়ে যায় তার স্বভাব ও চরিত্র। কারণ মানুষই মানুষকে প্রভাবিত করে। তাই পবিত্র বাইবেলের একটি বিখ্যাত বাণী হলঃ “সঙ্গ দোষে চরিত্র নষ্ট!…(১ করিন্থীয় ১৫:৩৩)। আবার পবিত্র বাইবেলের, সামসঙ্গীত ১০৬:৩৫-৩৯ এ উল্লেখ করা হয়েছেঃ

 

বরং বিজাতীয় মানুষের সঙ্গে তারা মেলামেশা শুরু করে দিল, তাদের আচার-নীতি শিখতেও লাগলো। বিজাতীয়দের যত অলীক দেবতারই পূজারী হল তারা; ওগুলো তাদের পথে হয়ে উঠল ফাঁদেরই সমান। নানা অপদেবতার কাছে যজ্ঞবলি রূপে তারা নিজেরদের পুত্র কন্যাদের উৎসর্গ করলো; নির্দোষ প্রাণের রক্ত এই ভাবে ঝরাল সেদিন, পুত্র কন্যাদেরই রক্ত ঝরাল তারা! কানান দেশের যত অলীক দেবতারই উদ্দেশে তাদের বলি দিল তারা; রক্তস্রোতে সারা দেশ কলুষিত হল। এমনি করেই তারা নিজেদের করল অশুচি; নিজেদের কর্মদোষে হল তারা যত গণিকার মতো!

 

প্রভু যীশু তাঁর প্রতি বিশ্বাসী মানুষজনকে এই জগৎসংসারের থেকে আলাদা করে রেখেছেন এবং তিনি চান প্রতিটি খ্রীষ্টান যেন এই জগৎসংসারের থেকে পৃথক ভাবেই জীবনযাপন ক’রে…(যোহন ১৫:১৯)। “জগৎসংসারের থেকে আলাদা” এর অর্থ কী? যীশু কী তাহলে জগৎসংসারকে ঘৃণার চোখে দেখেন? “জগৎসংসার” শব্দটি আসলে একটি প্রতীকী শব্দ! সেই সমস্ত মানুষ যারা ভোগ-বিলাসিতায় জীবন যাপন করতে পছন্দ করে, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে চায়না, যারা কেবল নিজের স্বার্থ বোঝে কিন্তু অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে চায়না, এবং সবশেষে যারা যীশু খ্রীষ্টকে মানবজাতির একমাত্র ত্রাণকর্তা বলে ও সেই মঙ্গলময় প্রভু বলে গ্রহণ করতে চায়না; তাদের কে বোঝাতেই এই শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। একজন প্রকৃত খ্রীষ্টান হল সেই, যে নিজের জীবনযাপনের মাধ্যমে যীশু খ্রীষ্টের সত্তা ও আদর্শকে ফুটিয়ে তোলে। যে তার নিজের আচরণ, কথাবার্তা, পোশাক পরিচ্ছদ, আচার ব্যাবহার, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে খ্রীষ্টের মঙ্গলসমাচার কে পৃথিবীর মানুষের সামনে সক্রিয় ভাবে তুলে ধরতে পারে। একজন প্রকৃত খ্রীষ্টান কখনই বিধর্মী কিংবা অবিশ্বাসীদের আদর্শ ও মনোভাব অনুসরণ করতে পারে না। সে কখনই সেই জগৎসংসারের উদাহরণ মেনে চলতে পারে না, যে জগৎসংসার খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে তাঁকে হত্যা করেছে! একজন খ্রীষ্টানের জীবন আদর্শ যদি অখ্রীষ্টান ও বিধর্মীদের মতোই হয়, তাহলে তার পক্ষে খ্রীষ্টান হয়ে লাভটাই বা কী? এর থেকে ভাল তার পক্ষে খ্রীষ্টান না হওয়া বা খ্রীষ্টধর্ম ত্যাগ করা। এর ফলে তার দ্বারা সমাজের মানুষের কাছে খ্রীষ্টধর্মের সম্বন্ধে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়বে না। প্রভু যীশু বলেন; একজন খ্রীষ্টান হল এই জগৎসংসারের আলো…(মথি ৫:১৪-১৬)। যার মূল কাজই হল অন্যের জীবনকে আলোকিত করা। এ আলো জাগতিক আলো নয়। এ আলো মুক্তির আলো, পরিত্রাণের আলো, চেতনার আলো, পবিত্রতার আলো, শান্তির আলো, প্রজ্ঞার আলো, ঐশ্বরিক জ্ঞানের আলো ও বিশুদ্ধ জীবনযাপনের আলো। ঠিক এই কারণেই খ্রীষ্টান ও অখ্রীষ্টানদের মধ্যে সবসময়েই পার্থক্য থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক।

এখন দেখা গেল যে একজন খ্রীষ্টবিশ্বাসী, সে বিধর্মীদের মতো জীবনযাপন করছে। সে ভাগ্য গণনা, তন্ত্রমন্ত্র সাধন, ভ্রূণ হত্যা, ব্যাভিচার, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, সমকামিতা, জুয়া খেলা, ঠকবাজি, প্রতারণা, অপহরণ, চুরি এবং সুদের কারবার করে। এমন অবস্থায় সে কিন্তু আর কোন ভাবেই খ্রীষ্টের মূল শাখার সঙ্গে যুক্ত নেই। সে সামাজিক পরিচয়ে একজন খ্রীষ্টান হলেও, জীবনযাপন ও কর্মের দিক দিয়ে সে কিন্তু একজন বিধর্মী কিংবা নাস্তিকের চাইতেও অধম! তার জীবন আসলেই অনাচারে ভরা। এর অর্থ এই নয় যে একজন বিধর্মী বা নাস্তিকের জীবনযাপন যীশু খ্রীষ্টের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য। পাপ তো সকলেই করেছে, তবে সকলে একই ধরনের পাপ করেনি। কিন্তু কথা হল, যীশু খ্রীষ্টকে ও তাঁর শিক্ষাবাণীকে জানবার পরেও যখন কেও অধর্ম, পাপ ও অনাচারের জীবনযাপন করতেই থাকে, তাকে কী বলে ডাকা যায়? তার পরিচয় কী হতে পারে? তাকে কী আর খ্রীষ্টান বলে ডাকা যায়? অবশ্যই না! সে বলতে গেলে প্রভু যীশুকে মানুষের সামনে উপহাসের পাত্র করে তুলেছে! অপমান ও লাঞ্ছনার বস্তু করে তুলেছে। তাই এই অর্থে সে একজন বিধর্মী কিংবা অবিশ্বাসীর চাইতেও অধম। একজন জানে কোনটা ঠিক, তবুও সে নিজের ইচ্ছায় ভুলটাই করছে, আর অন্যদিকে একজন কোনটা ঠিক তা না জেনে ভুলটাই করছে; এদের দুজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী কে? এদের দুজনের মধ্যে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বিচারে দাঁড়াতে হবে কাকে? আশা করছি এটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাই যখন একজন খ্রীষ্টানের জীবন অনাচারে ভরে, তখন ঈশ্বর তাকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। খ্রীষ্টধর্ম আধ্যাত্মিকরূপে ঈশ্বরের সাথে মানুষের এক বৈবাহিক সম্পর্কের মতো…(এফেসীয় ৫:২১-৩৩)। পবিত্র বাইবেলে ঈশ্বরকে স্বামী রূপে এবং তাঁর মনোনীত জাতির মানুষজনকে তাঁর বধূ রূপে কল্পনা করা হয়েছে। আসল বিবাহে যেমন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে আমৃত্যু একসাথে থাকবার সন্ধি বা অঙ্গীকার করা হয়, তেমনই খ্রীষ্টধর্মে একজন বিশ্বাসী মানুষ আমৃত্যু যীশু খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে বলেই শপথ গ্রহণ করে থাকে। একজন বিবাহিত পুরুষ বা নারী, তার জীবনসঙ্গীকে বাদ দিয়ে যখন অন্য কারও সাথে আলাপ চারিতা করতে শুরু করে, তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তখন সেই বিবাহ আর স্থায়ী থাকে না। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার সেই স্বামী বা স্ত্রী তখন বিবাহ বিচ্ছেদের পথেই পা বাড়ায়। আপনি যাকে বিবাহ করেছেন, সে যদি আপনার প্রতি বিশ্বস্ত না থাকে, আপনি কী তার সাথে আজীবন থাকতে চাইবেন? বিশ্বস্ততার উপরেই সম্পর্ক টিকে থাকে, আর বর্তমান যুগে আমরা দেখতে পাচ্ছি কেন এত অধিক পরিমাণে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে, কেন অনেকদিনের সম্পর্কও অচিরেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই আপনি এমন কোন মানুষের সাথে থাকতে চাইবেন না, যে আপনার প্রতি বিশ্বস্ত নয়। ঠিক তেমনই, প্রভু ঈশ্বরও এমন কোনও মানুষের জীবনে থাকবেন না, যে মানুষ তার প্রতি বিশ্বস্ত নয়।  

 

সব শেষে একটা কথা বুঝতে হবে যে, যদি আপনি এমন কোনও ব্যাক্তির দেখা পান, যে নিজেকে খ্রীষ্টবিশ্বাসী বলে পরিচয় দেয়, অথচ যার জীবনে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ধর্মশিক্ষা ও আদর্শের বাস্তবিক উদাহরণের অভাব আছে, সেই ব্যাক্তির জীবনে প্রভু যীশুর কোনও অস্তিত্ব নেই। সে আসলে যাত্রা-পালার একজন অভিনেতা, সে এমন এক চরিত্রে অভিনয় করছে, যেটা সে নিজেই আসলে নয়! প্রভু যীশু স্পষ্ট ভাবেই এ কথা জানিয়ে গেছেন যে, যে তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকে না, সে আসলে মৃত…(যোহন ১৫:৫-৬)। এ ব্যাপারে আপনি নিজেই বিবেচনা করে দেখুন, আপনি বর্তমানে এখন কোন অবস্থায় আছেন। আর আপনি যদি একজন নতুন খ্রীষ্টবিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তাহলে প্রভুর আজ্ঞা মেনে চলুন। সবসময়, সমস্ত জায়গায়, নিজের বাড়িতে এবং নিজের সমাজে একটি উদাহরণ হয়ে উঠুন। যেন মানুষ আপনার সাথে দেখা করবার পর, আপনার সাথে কথা বলবার পর, স্বয়ং প্রভু যীশুকে যেন আপনার মধ্যে দেখতে পায়। কারণ পবিত্র বাইবেলে এ কথা লেখা আছে, “আমি আর জীবিত নই, বরং আমার মধ্যে স্বয়ং খ্রীষ্টই জীবিত আছে!” (গালাতীয় ২:২০)।

Ahmedabad