সমস্ত ধর্মই কি সমান? সমস্ত ভগবানই কি এক?

 

 



 

আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ন নিশ্চিত যে, "সমস্ত ধর্ম সমান", "সমস্ত ভগবান এক", "সমস্ত ঠাকুর ও দেবতারা একই"; এই ধরনের কথা আপনি জীবনে অন্তত একবার হলেও শুনেছেন। এই ধরনের বক্তব্য আমরা প্রায়শঃই হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মুখ থেকে শুনতে পাই। শুধু তারাই নয়, আরও অগণিত মানুষ আছেন, যারা এই তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। এখন মূল বিষয়টি হলো যে, আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা এই তত্ত্বে বিশ্বাস করি না। কারণ "সবই এক, সবই সমান!", এই তত্ত্বটি সম্পূর্ন ভাবে মিথ্যা এবং পবিত্র বাইবেলে প্রকাশিত সত্যের বিরুদ্ধে। খ্রীষ্টের বাণীপ্রচার করতে গিয়েও অনেক সময় আমাদের এই তত্ত্বের সম্মুখীন হতে। এই ভাবে যীশু খ্রীষ্টের মঙ্গলসমাচারের মূল উদ্দেশ্যটি 'ওই তত্ত্বে' বিশ্বাসী মানুষ ব্যর্থ করে দিতে চায়। প্রকৃত প্রজ্ঞার অভাবে বহু মানুষ ভুল পথে চলে যায় এবং অসত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে। পবিত্র বাইবেলে মহান ঈশ্বর আমাদের এই কথা বলেন, "আমরা যেন মানুষের সমস্ত ভুল ধারণা ভেঙে দিয়ে তাদের সত্যের পথে চালনা করি (২ তিমথি ৪:২-৩, বাইবেল)"। এই লেখাটির উদ্দেশ্য কোনও বিশেষ সম্প্রদায় ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করা নয়, বরং সত্য এবং বাস্তব জ্ঞানের আলোয় সঠিক ঈশ্বর জ্ঞান অর্জন করা। তার সঙ্গে, খ্রীষ্টবিশ্বাসী হিসেবে আমাদের কোনও রকমের ধর্মীয় কুংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে প্রশ্রয় দেওয়াও উচিত নয়। সঠিক মূল্যায়ন ও স্বচ্ছ বুদ্ধির দ্বারা ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে তোলাই আমাদের একান্ত কাম্য। এর ফলে আমরা সকল মানুষের সাথে নৈতিক আচরণ করতে পারবো। আমি আশা করবো, পাঠক মুক্ত মনে পুরো বিষয়টি জ্ঞান অর্জন করার জন্য পড়ে বোঝবার চেষ্টা করবেন।  আসুন, পুরো বিষয়টি পবিত্র ক্যাথলিক মন্ডলীর ধর্ম শিক্ষা ও বাইবেলের আলোয় জেনে নেওয়া যাক।

 


বাস্তব বিশ্লেষণ / Reality Analysis

১) Equality Problem / সমানতা সমস্যা

 

"সমস্ত ধর্ম সমান, সমস্ত ভগবান একই", আপাত দৃষ্টিতে দেখলে আমরা এই বক্তব্যের মধ্যে কোনও সমস্যা দেখতে পাইনা। অনেকের কাছেই এই কথাটি খুবই উচ্চমানের একটি বক্তব্য বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যখন আমরা এই বক্তব্যের স্বচ্ছতা ও সত্যতা যাচাই করার জন্য Analogical Method বা সাদৃশ্য পদ্ধতি ব্যবহার করবো, তখনই এর দুর্বলতা এবং মিথ্যাটি বেড়িয়ে পড়বে। আমরা এখানে দুটি Analogy ব্যবহার করবো।

 

 

ক) সমস্ত নারী সমান, সমস্ত নারী একই!

 

ধরুন আমরা যদি বলি, সমস্ত নারী সমান ও তারা সকলে একই, তাহলে এর মধ্যে সমস্যা কোথায় ? পৃথিবীর সমস্ত নারীর মধ্যে আপনার মা, বোন, প্রেমিকা, স্ত্রী, বা কন্যা আছে এবং আছে সেই সমস্ত নারীরাও যারা বেশ্যাবৃত্তি করে, ব্যভিচার করে, অশ্লিল চলচ্চিত্রে (Pornography) কাজ করে। এখন আপনি কি আপনার মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা বা প্রেমিকার সাথে 'তাদের' তুলনা করে 'সকলেই সমান' বলে দাবি করবেন কী ? কারণ তারা সকলেই নারী ? অবশ্যই আপনি সেটা করবেন না! জন্মগত জৈবিক পরিচয়ে তারা সকলে নারী হলেও, স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রত্যেকেই পরস্পরের চেয়ে সম্পূর্ন আলাদা।

 

খ) সমস্ত জল সমান, সবই এক!

 

আচ্ছা যদি বলি, সমস্ত জল সমান, সব জলই এক! তাহলে আপনি কি সেটা মেনে নেবেন ? এই যেমন ধরুন সমুদ্রের জল, নদীর জল, পুকুরের জল কিংবা নর্দমার জল; এগুলো সবই তো জল। তা আপনি কি এই সব জলই পান করেন ? অবশ্যই না! মানুষ জল পান করার সময় স্বচ্ছ পরিশোধিত পানীয়জলই পান করে। জল বলেই কেউ সুমুদ্রের জলপুকুরের জল বা নর্দমার জল নির্দ্বিধায় পান করে না। অন্তত আমার তেমন কাউকেই জানা নেই।

 

আশা করি আপনি বুঝেত পেরেছেন যে, "সবাই সমান, সবই এক"; এই বক্তব্যের মধ্যে আসল সমস্যাটা কোথায়।এবার আমরা আরও একটি বিশ্লেষণ প্রণালী প্রয়োগ করে দেখবো।

 

 

 

ঐশতাত্বিক বিশ্লেষণ / Theological Analysis

 ২) Fundamental Problem / মৌলিক সমস্যা

 

আপনি যে কোনও ধর্মের মানুষকে যদি এই প্রশ্ন করেন, "কতজন ঈশ্বর আছেন ?", অধিকাংশ জন উত্তর দেবে, "একজন!"। এখন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর যদি একজনই হন, তাহলে তাঁর পথ এক হবে, তাঁকে উপাসনা করার নিয়ম ও পদ্ধতিও এক হবে, তাঁর সিদ্ধান্তগুলো এক হবে। কারণ ঈশ্বর শ্বাশত, তাই তার স্বভাবও শ্বাশত ও অপরিবর্তনীয়। তিনি সকল মানুষকে একই বিধান সমান ভাবে পালন করতে বলবেন। তিনি সকল মানুষের কাছে ভিন্ন ভিন্ন বিধান প্রকাশ করবেন না। এতে বিশৃঙ্খলা ও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি হবে। যেহেতু তিনি নিজেই সত্য এবং স্বভাবে মৌলিক ও অদ্বিতীয়!

 

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৪৩০০ টি ধর্ম রয়েছে। এখান থেকে আমরা দুটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি।

 

হয়, ৪৩০০ টি ধর্মের মধ্যে কেবল মাত্র একটাই ধর্ম সত্য, বাকি সব মিথ্যা!

 

না হয়, ৪৩০০ টি ঈশ্বর আছে এবং তারা সকলেই পরস্পরের থেকে আলাদা।

 

এখন আপনার হাতেই সত্য মিথ্যা বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম। কোনও ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করেন যে "সমস্ত ধর্ম সমান, সবই এক", তাহলে তাকে সমস্ত ধর্মের ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতিনীতি সমান ভাবেই পালন করতে হবে। অর্থাৎ তাকে সমান ভাবে বাইবেল, কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক, গ্রন্থসাহেব ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের সকল নির্দেশ সমান ভাবে পালন করে মেনে চলতে হবে। তাকে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, মঠ, গুরুদয়ারা অন্যান্য সকল ধর্মীয় স্থানে তাদের নিয়ম অনুযায়ী উপাসনায় প্রতিনিয়ত অংশগ্রহণ করতে হবে। বিশ্বাস কাজে প্রমাণিত হয়, শুধুমাত্র মুখের কথায় নয়। কোনও ধর্ম গ্রন্থেই এই কথা বলা নেই যে, "সমস্ত ধর্ম সমান ও সকলেই এক"। এ আসলে মানুষের বানানো কথা। যা বহুকাল ধরে চলে আসছে। তাই আপনি নিজের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এই নিয়ে কেউ যেন আপনার মন ভোলাতে না পারে।

 





If everything is equal, then everything has equal value and Equal value = 0

যদি সবই সমান হয়, তাহলে সবকিছুর মূল্য সমান এবং সমান মূল্যের ফলাফল শূন্য হবে।

অর্থাৎ, সমস্ত ধর্ম যদি সমান হয়, তাহলে সমস্ত ধর্মের মূল্যও সমান হবে এবং সমস্ত ধর্মের মূল্য যদি সমান হয়, তাহলে সমস্ত ধর্মের সমান মূল্য হলো শূন্য। তাহলে পৃথিবীর সকল ধর্মই অর্থহীন!

 

 

এই জগতের কোনও কিছুই আসলে সমান নয়

 

আপনি মানুন বা না মানুন, বিশ্বাস করুন বা না করুন; এই জগতের সবকিছুই পরস্পরের চাইতে ভিন্ন ও একেবারেই অদ্বিতীয় (Different and Unique)আপাত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল অনেক কিছুই আমাদের কাছে "সমান" বা "একই" বলে মনে হতে পারে কিন্তু মৌলিক ভাবে প্রতিটি বিষয় পরস্পরের থেকে আলাদা। পৃথিবীতে ৭০০ কোটিরও অধিক মানুষ বসবাস করে। অথচ প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ (Finger print) আলাদা। প্রতিটি মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য আলাদা। প্রতিটি মানুষের স্বভাব আলাদা। প্রতিটি মানুষের দেহের রং, গঠন, আকৃতি ও ওজন আলাদা। সৃষ্টিকর্তা প্রভু, জগতের সমস্ত কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সৃষ্টি করেছেন। যাতে সবকিছুর নিজস্ব মূল্য, অর্থ ও মর্যাদা থাকে। যদি তিনি সবকিছুই সমান রূপে সৃষ্টি করতেন, তাহলে কোনও কিছুর মূল্য থাকতো না। আমরা কোনও কিছুর মূল্য নির্ধারণ করে থাকি তার বিশেষ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের কারণেই। যদি সোনা, রূপ আর লোহা একই বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর হতো, তাহলে এই তিনটি ধাতুই মানুষ একই দামে কিনতে পারতো। যদি আপনি প্রকৃত অর্থেই একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি হন, তাহলে আপনি এই ব্যাপারে সহমত হবেন।

 

যাদের প্রকৃত ঈশ্বরজ্ঞান নেই, যাদের সঠিক ধর্মশিক্ষা নেই, যারা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে তফাৎ করতে জানে না, যারা নিজের ভ্রান্ত ধারণার পথে চলতে চায়, যারা কুসংস্কারে বিশ্বাসী, যারা নিজের জীবন যাপনের মন্দ দিকগুলি পাল্টাতে চায় না, যারা যীশু খ্রীষ্টকে মানবরূপে প্রকাশিত প্রকৃত ঈশ্বর বলে গ্রহণ করতে চায়না, ওই তারাই "সমস্ত ধর্ম সমান, সমস্ত ভগবান একই" এই ভ্রান্ত যুক্তি খাড়া করে। অথচ তাদের কেউই কিন্তু কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকেই সেই যুক্তি শাস্ত্র থেকে উল্লেখ করে দেখাতে পারবে না। তাদের প্রশ্ন করলে তারা এড়িয়ে যাবে।

 

মনে রাখবেন, "সমস্ত ধর্ম সমান, সমস্ত ভগবান একই", এটি প্রভুর নয়, বরং শয়তানের শিক্ষা! সে মানুষকে প্রকৃত ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সড়িয়ে ভ্রান্ত পথে চালনা করতেই এই ভুল শিক্ষা বহু মানুষের অন্তরে বসিয়ে দিয়েছে। যে কেউ এই শিক্ষায় চলে, সে কোনও দিন পরিত্রাণ পাবে না। সে কোথাও শান্তি পাবে না। সে ব্যক্তি অন্যকেও সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারবে না।

 

যে কেউ, তার জাতি ধর্ম বর্ণ যাই হোক না কেন, খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের বাইরে পা বাড়ায়, যীশুকে গ্রহন করতে চায়না, সে ঈশ্বরকে কোনদিন পাবে না। ঈশ্বরকে পাওয়ার একটাই মাত্র পথ এই জগতের বুকে আছে, তা হলো যীশু খ্রীষ্ট (২ যোহন ১:৯, বাইবেল)। কিন্তু যে সকল মানুষ খ্রীষ্টীয় শিক্ষার বাইরে গিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়ার চেষ্টা করবে, তারা সকলেই ভুল পথে চলে যাবে ও নিজের আত্মাকে অনন্তকালের জন্য হারিয়ে ফেলবে। অবশ্য এর জন্য তারা নিজেরাই দায়ী থাকবে (২ থেসালোনিকিয় ১:৮-৯, বাইবেল)।

সত্য সনাতন ধর্ম একটাই, তা হলো খ্রীষ্টধর্ম। প্রকৃত ও সত্যময় সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর একজনই। তিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। তিনিই এই কথা বলছেন : 

জেনে রাখ, শীঘ্রই আসছি আমি। মানুষের কাজের জন্যে আমার যা দেবার আছে, তা সঙ্গে নিয়েই আসছি আমি। প্রত্যেককে আমি দেব তাদের কাজের যোগ্য প্রতিফল। “আমিই আলফা, আমিই ওমেগা; আমিই প্রথম, আমিই শেষ; আমিই আদি, আমিই অন্ত!” (প্রত্যাদেশ ২২:১২, বাইবেল)।

 

 

 

 

 

নবীনতর পূর্বতন